New Posts

মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন

মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন



মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সমাজের মেরুদণ্ড। এই স্থানেই তরুণ প্রজন্মের মেধা, মনন, ও চারিত্রিক গঠন হয়। বর্তমান সময়ে শিক্ষাঙ্গন শুধুমাত্র শিক্ষার স্থান নয়, এটি একটি সামাজিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষাঙ্গনকে আমরা একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে প্রশিক্ষিত হবে। কিন্তু আজকের দিনে শিক্ষাঙ্গনে মাদক ও মদ্যপানের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে, যা শিক্ষার পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে "মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন" গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। মদ্যপান শুধু একজন ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্যকে নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটি আরও গুরুতর, কারণ এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। মদ্যপানের ফলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিতে পারে না, তাদের স্মরণশক্তি কমে যায়, এবং তারা ক্রমাগত উদ্বেগ ও বিষণ্নতার শিকার হতে পারে। এছাড়াও, মদ্যপান শিক্ষার্থীদের মধ্যে আক্রমণাত্মক ও অপরাধমূলক আচরণকে উৎসাহিত করতে পারে, যা শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আজকে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক নিজেই মাদকগ্রস্ত। মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ার জন্য, ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, এবং প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন হতে পারে। শিক্ষাঙ্গনে মদ্যপানের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মদ্যপান ও মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত, যেখানে বিশেষজ্ঞরা মদ্যপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করবেন। শিক্ষার্থীরা নিজেরা মদ্যপান থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি তাদের বন্ধুদেরও সচেতন করতে পারে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের দায়িত্ব হলো নিজের ও অন্যদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করা এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা। তারা যদি নিজেরা সচেতন হয়, তবে অন্যদেরও সচেতন করতে পারবে, যা মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়তে সহায়ক হবে। শিক্ষাঙ্গন মদ মুক্ত রাখতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানদের মদ্যপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের মদ্যপানের পথে যেতে না দেওয়া। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের নেতৃবৃন্দেরও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথা থেকে এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবর এসেই চলেছে যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেবারে হওয়ার না।
এমন এক সময়ে যখন কলকাতার স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরে থেকে ধর্ষণের মামলা অহরহ এসেই চলেছে। 
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অনুসারে 2022 সালে, সর্বশেষ বছর যেটির জন্য রেকর্ড পাওয়া যায়, পুলিশ 31,516টি ধর্ষণের রিপোর্ট রেকর্ড করেছে – যা 2021 থেকে 20 শতাংশ লাফিয়েছে। 
• উত্তরপ্রদেশে সোনভদ্রে শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষণের অভিযোগ। 
• ঝাড়খণ্ড: জামশেদপুরে স্কুল ভ্যান চালকের দ্বারা 3.5 বছর বয়সী নার্সারি ছাত্রী ধর্ষণ|
• মহারাষ্ট্র: স্কুলে দুই নাবালিকা ধর্ষণ
• কর্ণাটকের স্কুল শিক্ষক ১১ বছরের ছাত্রীকে ক্লাসে ধর্ষণের চেষ্টা, গ্রেফতার
• অরুণাচল প্রদেশে ১৩ বছরের কিশোরীকে অপহরণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
• মুম্বাই: মালাদে স্কুলের ওয়াশরুমে পিয়ন 4 বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের প্রতিবাদ
• বেঙ্গালুরুর স্কুলে 10 বছরের ডিসলেক্সিক মেয়েকে অধ্যক্ষের দ্বারা ধর্ষণ।
এতগুলো সব ঘটনা কোন সাধারণ মানুষের দ্বারা না বরঞ্চ যাদের হাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের হাত দ্বারা ঘটেছে। আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শুধু মদ মুক্ত করলে হবে না আরো অনেক কিছু রয়েছে যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূর করা ও মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাঙ্গনে মাদক, ড্রাগস, ধর্ষণ, নেশা, র‌্যাগিং নতুন নয় যা দিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেড়ে চলেছে। এগুলো বাড়ার একমাত্র কারণ অতীত সরকারের আমলে এগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলো থেকে ছাত্র সমাজকে দূরে রেখে ছাত্রদের চরিত্রকে উন্নত ও মহান করে তোলা জরুরী।

শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং ফিরে আসা পর্যন্ত মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। 
মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন একটি স্বপ্ন নয়, এটি একটি বাস্তবতা হতে পারে যদি আমরা সবাই মিলে এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য একযোগে কাজ করি। শিক্ষাঙ্গনকে মাদক ও মদ্যপান মুক্ত রাখার মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি, যা শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননকে বিকশিত করতে সাহায্য করবে। সমাজের প্রত্যেকেরই উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং মদ মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখা। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারব এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হব।

No comments