রমজান ও যুবসমাজ
প্রিয় যুবসমাজ,
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
আশা করি, তোমরা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছো। রমজানের পবিত্র মাস আমাদের দরজায়, আর এ মাস আমাদের আত্মশুদ্ধি, সংযম ও তাকওয়ার প্রশিক্ষণের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়। আল্লাহর অসীম দয়ার বরকতময় এই মাসে আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা, এবং সৎ ও ন্যায়ের পথে চলার শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি।
সাধারণত আমরা রমজান মানে সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকাকে মনে করি। আসলে কি এরই নাম রমজান।
রমজান মানেই আত্মশুদ্ধি। রমজান মানেই সিরাতে মুস্তাকিম এর পথে চলার প্রতিশ্রুতি। রমজান হল তাকওয়া অর্জনের মাস, আত্মগঠনের সময়। একজন মুসলিম যুবকের জীবনে এই মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। যুবকরাই সমাজ পরিবর্তনের মূল শক্তি। নবী (সা.)-এর সাহাবীদের অনেকেই ছিলেন যুবক, যারা ইসলামের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ মাসে নিজেদের আত্মগঠনের সুযোগ রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আদর্শ জীবন গঠনে সহায়ক হবে।
তোমরা জানো, যুবসময় জীবনের সেই অধ্যায়, যখন শক্তি, সাহস ও উদ্যমের সর্বোচ্চ অবস্থান থাকে। এই সময়টি যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে ব্যক্তি নিজেও উপকৃত হয় এবং সমাজের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনে। আর রমজান ঠিক সেই সুযোগ এনে দেয়—এই মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে চরিত্র গঠনের শিক্ষা নেওয়া যায়, ইবাদতের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়, আর সৎকর্মের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করা যায়।
তোমাদের প্রতি আমার কিছু পরামর্শ:
১. নামাজ ও কুরআনের সান্নিধ্য: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবি আদায় করার অভ্যাস গড়ে তোলো। কুরআন শুধু তিলাওয়াতের জন্য নয়, বোঝার ও আমল করার জন্য নাজিল হয়েছে। প্রতিদিন কুরআন পড়ার চেষ্টা করো এবং তার অর্থ বোঝার দিকে মনোযোগ দাও।
2. সাবধান থাকো গুনাহ থেকে: সময়ের অপচয়, বাজে কথা বলা, গান-বাদ্য শোনা— এগুলো ত্যাগ করার উত্তম সময়। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার কমিয়ে রমজানে আত্মউন্নয়নে সময় ব্যয় করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া, অবসরের সময় বা বন্ধুদের আড্ডায় এমন কিছু করো না, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন, তাই চোখ, কান, মুখ, এমনকি চিন্তাগুলোকেও সংযত রাখার চেষ্টা করো।
৩. সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করো: দান-সদকা রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অসহায়, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। রাসুল (সা.) ছিলেন রমজানে সবচেয়ে বেশি উদার। অসহায়দের সাহায্য করো, দরিদ্রদের ইফতার দাও, এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করো।
৪. দুআ ও ইস্তেগফার করো: রমজান গুনাহ মাফের মাস। আল্লাহর কাছে নিজের ও পরিবারের জন্য দুআ করো এবং ক্ষমা চাও।
৫. নিজেকে একজন দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলো: রমজানে শুধুমাত্র সামাজিকভাবে রোজা পালন করলে হবে না সমাজবদ্ধভাবে জীবন চলার অঙ্গীকার করতে হবে। সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্য নিজেকে তৈরি করো। ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করো এবং অন্যদেরও ভালো পথে আহ্বান জানাও।
প্রিয় বন্ধুরা, রমজান মাসের আগমনে যতটা খুশি হয় তার বিদায়ে ততটা কি দুঃখ পেয়েছি। যদি না পায় তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়। ??? রমজান আমাদের জীবনের একটি মহাসুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যদি আমরা নিজেদের উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই এর সুফল আমরা পাবো। তোমরা যদি এই মাসে সৎ অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারো, তাহলে তা পুরো জীবন তোমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। আসুন, আমরা এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে তাকওয়াবান যুবক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলি, যেন দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের মর্যাদা বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের জীবনকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন।
ওয়াসসালাম,
তোমাদের এক শুভাকাঙ্ক্ষী
No comments