তাফসীর সূরা ফুরকান (২৭-৩০)
তাফসীর সূরা ফুরকান (২৭-৩০)
আমরা জানি যে কোরআনের বিভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন: কুরআন, কিতাব, কিতাবুল আজিজ, কিতাবুল হাকিম, বয়ান, কিতাবুল্লাহ আরো অনেক অনুরূপ ভাবে ফুরকান ও।
فرقان মূল শব্দ ف ر ق ফারাক মানে আলাদা
ফুরকান মূলত: সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়, তৌহিদ ও কুফর, হক ও বাতিল পার্থক্য করিকে বলা হয়।
যেহেতু এই সুরাতে , কিংবা কোরআনে অনেক কিছু স্পষ্ট ভাষায় পার্থক্য করেছে তাই একে ফুরকান বলা হচ্ছে।
وَ یَوۡمَ یَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰی یَدَیۡہِ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِی اتَّخَذۡتُ مَعَ الرَّسُوۡلِ سَبِیۡلًا ﴿۲۷﴾
যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবেঃ হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎ পথ অবলম্বন করতাম!
আগে আমাদের background বুঝান লাগবে।
কেনই বা রসূলদের যুগে যুগে আগমন ঘটেছে।
রাসূল দের পাঠানোর উদ্দেশ্য কি ছিল?
রাসূলকে বন্ধু বানানো বলতে কি বুঝানো হয়েছে।
বিশ্বনবির প্রেমই আল্লাহর ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত
এখন তো আর রসুল বেচেঁ নেই তাহলে কিভাবে তিনাকে বন্ধু বানাবো তাইনা।
তিনার সুন্নাত তিনার পথ কে আপনাতে হবে।
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩১)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করাকে তাঁর অনুসরণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ ۚ وَ مَنۡ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا ﴿ؕ۸۰﴾
যে কেহ রাসূলের অনুগত হয় নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই অনুগত হয়ে থাকে, এবং যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে রক্ষক রূপে প্রেরণ করিনি।
وما اتكم الرسول فخذه....
প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত। কেমন ভালোবাসতে হবে প্রিয় নবিকে? আর সাহাবায়ে কেরাম কেমন ভালোবাসতে তাঁকে? তাঁকে ভালোবাসার বিষয়ে কী বলেছেন তিনি?
মুমিন মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে কিনা তা বুঝার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা। কেননা প্রিয় নবির সঙ্গে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সম্পর্কিত আলোচনাই তার প্রমাণ-
- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি, তবে নিজের জানের চেয়ে বেশি নয়। নবিজী বললেন, ওহু! তাহলে তো এখনো (ঈমান পরিপূর্ণ) হয়নি। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! যতক্ষণ না আমি তোমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় না হব ততক্ষণ তোমার ঈমান পূর্ণ হবে না।
কিছুক্ষণ পর হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর শপথ! এখন আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে গেছেন। নবিজী বললেন, ‘হ্যাঁ’, ওমর! এখন তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে।’ (বুখারি)
% নবীর প্রতি আবু বকরের ভালোবাসা %
,
,
রাত তখন গভীর। মক্কার আকাশে জ্বলজ্বল করছে লক্ষ তারা। পুরো শহর গভীর ঘুমে। ঠিক তখনই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। এগিয়ে যান চুপি চুপি; নি:শব্দে। বার বার পেছনে ফিরে তাকান। হায় মাতৃভূমি! কষ্টে বুকটা ফেটে যায়!!
কত রাতইতো তিনি জেগে জেগে কাটিয়েছেন। অন্ধকারে হেঁটেছেন মক্কার অলি-গলি। কখনোই তাঁর প্রিয় শহরটাকে এতো অসহায় মনে হয়নি। আজ তাঁর বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে বিচ্ছেদের বেদনায়। ভালোবাসা বুঝি একেই বলে! তিনি বার বার পিছনে ফিরে তাকান। “বিশ্বাস করো, ওরা যদি আমাকে তোমার বুক থেকে বের করে না দিতো তাহলে কখনোই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।” নিজের মাতৃভূমির দিকে ফিরে ফিরে বার বার তিনি চোখ মুছেন।
আবারো হাঁটেন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির দরোজার সামনে এসে দাঁড়ান। কড়া নড়ে উঠার আগেই খুলে যায় দরোজাটা। তিনি অবাক হয়ে দেখেন, বন্ধু যে তাঁর আগে থেকেই জেগে আছেন তাঁর অপেক্ষায়।
“যেদিন থেকে আপনার মুখে হিজরতের কথা শুনেছি সেদিন থেকেই তৈরি হয়ে আছি। রাতকে হারাম করে দিয়েছি; কখন আপনি আসেন তাই।” বিনয়ের সঙ্গে মুহাম্মদ সা. কে বলেন বন্ধু আবু বকর রা.।
এই তো প্রকৃত বন্ধুত্ব। এই তে বন্ধুর জন্য বন্ধুর ভালোবাাসা! বন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। গভীর ভালোবাসায় নিজের বাহুবন্ধনে জড়িয়ে নেন বন্ধুকে।
তখনো পুরো শহর ঘুমিয়ে। রাত জাগা পাখির কিচির-মিচির আকাশে বাতাসে। তারাগুলো ঠিক আগের মতোই জ্বলছিলো। সবার অজান্তে পেছনের দরোজা দিয়ে বেরিয়ে পড়েন তারা। যেভাবেই হোক সূর্য উঠার আগেই ছাড়তে হবে মক্কাভূমি। চলে যেতে হবে শত্রুদের নাগালের বাইরে।
ঘর থেকে বেরিয়ে পথে এসে দাঁড়ান তারা। কোন পথ ধরে এগুবেন ভাবতে থাকেন। উত্তরের প্রধান সড়কটি চলে গেছে মদিনার দিকে। সকালে যখন কাফেররা বুঝতে পারবে তাদের শিকার হাত ছাড়া হয়ে গেছে তখন প্রথমেই তারা এ পথটি ধরে খুঁজতে থাকবে। মদিনায় যাওয়ার এ পথটিই তাদের প্রধান টার্গেট হবে। আর মক্কা থেকে দক্ষিণে যে পথটি বের হয়েছে সেটি চলে গেছে ইয়েমেনের দিকে। শাখা পথ হওয়ায় কাফেরদের সন্দেহ এ দিকটায় পড়বে না। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন কোন পথ দিয়ে মক্কা থেকে বের হবেন। তার ভাবনা দেখে সফরসঙ্গী; প্রিয় বন্ধু আবু বকর রা. বলে ওঠেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মনে হয় দক্ষিনে ইয়েমেনগামী পথটি ধরে হাঁটলেই সবচে ভালো হয়।”
তিনিও এমনটাই ভাবছিলেন। ওদিকে সকাল হয়ে এলো বলে। তিনি আর সময় ক্ষেপণ করতে চাইলেন না। বন্ধু আবু বকর রা. কে বললেন, আবু বকর, চলো দক্ষিণের পথটি ধরেই এগিয়ে যাই। ওরা সকালে যখন আমাদের দেখবে না তখন উত্তরে মদিনার পথটি ধরেই আগে খোঁজবে।
চাঁদের আলোয় র্দীঘ পাঁচ মাইল পথ অতিক্রম করে অবশেষে ‘গারে সওরের’ সামনে এসে দাঁড়ান তারা। ততক্ষণে সূর্য রাঙিয়ে দিয়েছে আরবের আকাশ। হয়তো কাফেররা খুঁজতে বেরিয়ে গেছে তাদের। তিনি ভাবলেন, দিনের আলোয় এভাবে মক্কা ছাড়া যাবে না। সিদ্ধান্ত নিলেন, আপাতত গারে সওরের কোনো একটি গুহায় আশ্রয় নিবেন।
চোখের সামনে আকাশছোঁয়া পর্বত। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথরের পর পাথর। জায়গাটায় কখনো কোনো মানুষের ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে হয় না। তিনি ও আবু বকর রা. দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছেন, কীভাবে আশ্রয় নেবেন পর্বতের গুহায়। পেছনে শত্রুরা। এদিকে সময়ও বেশি নেই। এতো কিছুর পরও তাঁর চেহারায় চিন্তার লেশমাত্র নেই। ভাবলেশহীন কন্ঠে আবু বকর রা. কে ডেকে বলেন, “আবু বকর! চলো এখানেই কোনো গুহা খুঁজে নেই।”
তিনি তাঁর পবিত্র জুতা মুবারক খুলে হযরত আবু বকর রা. এর হাতে দিয়ে পায়ের এক কোণ দিয়ে হাঁটতে লাগলেন। তিনি এই কৌশল অবলম্বন করেছেন যাতে শত্রুরা তাঁদের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে না পারে।
কন্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে অবশেষে একটি গুহা খুঁজে পেলেন। হযরত আবু বকর রা. চিন্তিত কন্ঠে আরজ করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আগে এতে প্রবেশ করে ভালোভাবে দেখে নেই তারপর আপনি প্রবেশ করুন।”
হযরত আবু বকর রা. গুহায় প্রবেশ করে অনেকগুলো সাপের গর্ত দেখে চিন্তায় পড়ে যান। “হায় এতে আমার প্রিয় নবি কীভাবে থাকবেন!” সব ভেবে নিজের কাপড় ছিড়ে ছিড়ে গর্তের মুখগুলো বন্ধ করে দেন। তারপরও দুটো গর্ত বাকি রয়ে যায়। আবু বকর রা. গভীর দু:শ্চিন্তায় পড়ে যান, এই ছিদ্র দুটিই যদি বন্ধুর বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়! তাহলে উপায়?
তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের পা দিয়ে বন্ধ করে রাখবেন ছিদ্র দুটি। করলেনও তাই। এবার তিনি নিশ্চিন্ত। প্রাণের বন্ধু; আখেরি নবী সা. এবার নিরাপদ। গুহা থেকে মুখ বের করে ডাকেন, “ ইয়া রাসুলাল্লাহ! দয়া করে গুহায় প্রবেশ করুন।”
দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে আবু বকর রা. এর কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। হযরত আবু বকর রা. জেগে থাকেন। দুচোখের পাপড়ি এক করেন না একটি মূহূর্তের জন্যও। যদি প্রিয় নবীর কিছু দরকার হয়, তাই।
হঠাৎ এক সাপ এসে দংশন করে হযরত আবু বকর রা. এর পায়ে। মূহূর্তেই পুরো শরীর নীল হয়ে যায়। ফুরিয়ে যেতে থাকে সব শক্তি। কিন্তু তখনো তিনি ছিদ্রের মুখ থেকে পা নড়ান না। যদি এতে হুজুর সা. এর ঘুম ভেঙে যায়। যদি তিনি কষ্ট পান। কিন্তু বিষের জ্বালা আর কতক্ষণ সহ্য করা যায়। তাইতো নিজের অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে হুজুর সা. এর পবিত্র চেহারা মুবারকে। ঘুম ভেঙে লাফিয়ে ওঠেন তিনি “আবু বকর! তোমার চোখে পানি কেনো?”
কি উত্তর দেবেন খুঁজে পান না হযরত আবু বকর রা.। তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে তোমার আবু বকর?” হযরত আবু বকর রা. ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ. আমাকে বিষাক্ত সাপ দংশন করেছে।”
তিনি অবাক হলেন, “তুমি আমাকে ডাকলে না কেন?” “ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার ঘুমে ব্যঘাত ঘটবে বলে ডাক দিইনি।”
অবাক হয়ে রাসুল সা. দেখলেন তাঁর প্রিয় সাহাবী বন্ধু হযরত আবু বকর রা. কে। দেখলেন নবীপ্রেমিক এক মহান ব্যক্তিকে। খুশিতে তাঁর বুকটা ভরে ওঠলো। দ্রুত নিজের পবিত্র লালা মুবারক লাগিয়ে দিলেন দংশিত স্থানে। দ্রুত সেরে উঠলেন হযরত আবু বকর রা. আর তাতেই পৃথিবী পেলো একজন খাঁটি নবীপ্রেমিক। নবীর ভালোবাসায় উৎসর্গীত এক মহান পুরুষকে।
তাহলে মুখে বলে দেওয়াটাই কি ভালো বাসা
না
মুখে বলে দেওয়াটা নবীর সাথে ভালবাসা ছিলনা।
মনে রাখতে হবে
বিশ্বনবির প্রেম বলতে শুধু মুখে মুখে রাসুল তোমায় ভালোবাসি বললেই হবে না; বরং তার আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণই উদ্দেশ্য। আর বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল আল কুরআন।
যাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবি।
لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (চরিত্রের) মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।
এটা তখনই সম্ভব যখন তুমি আল্লাহকে স্মরণ করবে , ভয় করবে
আর এটা একমাত্র সম্ভব যখন তুমি
ফজরের সময় প্রথম কাতারে দাড়াবে
আজকে আমরা আমাদের ঈমানকে দেখি, আমাদের নাফস কে দেখি। ফজরের আজান হচ্ছে, বান্দা সে নিজের শরীরে চাদর দিয়ে আছে কিন্তু যখন সে আজান শুনছে সে পুরো শরীরে চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে নিচ্ছে এটা আমাদের ঈমান, নাফস বলছে আরেকটু শুয়ে নি তুমি শুয়ে যাচ্ছ কিন্তু আজান আসছে الصلاة خير من النوم কিন্তু আমরা ভাবছি النوم خير من الصلاة এটা একেবারে নফসের গোলামী করা,নফসের কথা মানা, এটাতো একেবারে শিরক তুমি আল্লাহর কথা শুনছো না বরঞ্চ শয়তানের কুমন্ত্রণা র কথা শুনছো।
তুমি নিজের নাফসের কথা মেনে নিচ্ছ, কিন্তু আল্লাহর কথা মানতে পারছোনা।তুমি নাফসের হুকুম মানছো আর আল্লাহর হুকুম মানছো না।
শৈশবে ইমাম হাসান আল-বান্না ফযরের আযানের অনেক আগে মাসজিদে যাওয়ার প্রাক্কালে তাঁর মা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন ,
" এখনো ফযরের আযান হয়নি , তুমি এত আগে তাড়াতাড়ি কেন মাসজিদে যাচ্ছো?" উত্তরে ইমাম হাসান আল-বান্না বলেন,
"মুয়াজ্জিনের কাজ হচ্ছে মানুষকে জাগানো আর আমার কাজ হচ্ছে মুয়াজ্জিনকে জাগানো"।
শিবিরের কর্মী ফজরের নামাজে আগে।
যখন পুলিশ কে শিবিরের কোনো কর্মীকে ধরার হুকুম দেওয়া হতো তখন তারা মুসজিদে গিয়ে দেখতো কোন যুবক ফজরের নামাজে প্রথম কাতারে আছে তাকে ধরো সেই তো শিবিরের কর্মী কোনো সন্ধেও নেই।
এ কথা কোনো শিবিরের কর্মী বলছেনা, কোনো জামাতের লোক বলছে না, বরঞ্চ সেখানকার প্রশাসন, পুলিশ বলছে, পাবলিক বলছে।
আসলে সুন্নাত টা বুঝলাম না।
لقد كان في رسول الله أسوة حسنة
كان خلقه القران
وما كان ينطق عن الهوى....
یٰوَیۡلَتٰی لَیۡتَنِیۡ لَمۡ اَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِیۡلًا ﴿۲۸﴾
হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম!
কোরআনের অনেকগুলো বিশেষ্যতা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা আমরা চোখ দিয়ে দেখতে পারি আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা আমাদের অন্তরের চোখ দিয়ে দেখা লাগে।
তারমধ্যে : একধরনের হচ্ছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত মুতাশাবিহাত রয়েছে এবং মহকোমত রয়েছে।
এবং দ্বিতীয়ত কিছু আয়াত হাকিকে রয়েছে এবং মাজাজি রয়েছে।
কাফিরের কুফরের প্রতি ঘৃণা এবং মুমিনের ঈমানের প্রতি প্রেম ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এজন্য ইসলামী আকীদার অন্যতম আলোচ্য বিষয় ‘আল-ওয়ালায়াতু ওয়াল বারাআত’ (الولاية والبراءة)। (الـوِلايَـة) বিলায়াত বা ওয়ালায়াত অর্থ নৈকট্য, বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব। বারাআত (البراءة) অর্থ বিমুক্তি, সম্পর্কচ্ছিন্নতা, নির্দোষিতা বা অস্বীকৃতি।
কুরআন-হাদীসে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুমিনকে ভালবাসতে, তাঁর সাথে বিলায়াত (বন্ধুত্ব) প্রতিষ্ঠা করতে, কাফিরকে অপছন্দ করতে ও তার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
তাহলে যখন আমি কারোর সাথে বন্ধুত্ব করবো কিংবা শত্রুতা করবো তাহলে কার জন্য করবো।
কোরআন ও হাদিসের ভাষায় বন্ধুত্ব ও শত্রুতা সব কিছু কিন্তু আল্লাহর জন্য হতে হবে।
আর এই ভালোবাসাই ঈমানকে পরিপূর্ণ করে।
‘‘যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।
তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে সে এগুলো দ্বারা ঈমানের মিষ্টত্ব ও স্বাদ লাভ করবে: (১) মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) অন্য সকলের চেয়ে তার নিকট প্রিয়তর হবে, (২) সে আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা বা অপছন্দ করবে এবং (৩) বিশাল অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত করা হলে সে অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপিয়ে পড়াকে সে আল্লাহর সাথে শিরক করা অপেক্ষা অধিক পছন্দ করবে।’’[4]
কুরআন ও হাদীসের আলোকে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব, খারাপ বন্ধুত্বের পরিণতি, ভালো বন্ধু নির্বাচনে করণীয়।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রয়োজন, তেমনি সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির। কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে চলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিই এমন যে কোনো মানুষ একাকী থাকতে চায় না। সমাজের অন্য সবার সঙ্গে প্রীতির মেলবন্ধনে জড়িয়ে থাকতে আগ্রহী। এই পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মায়াজাল মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের আবহ সৃষ্টি করে। একেক জনের পেশা একেক রকম। তাই সমাজে একজনকে আরেকজনের প্রয়োজন পড়ে। এটা আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত। কেননা সমাজবদ্ধতার প্রশ্নে মানুষ একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সঠিকভাবে যথার্থ বন্ধু নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে মানুষ তার সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করে তোলে। এই বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি।
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصّٰدِقِينَ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও।
সূরা তাওবাঃ ১১৯
বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তাঃ
সমাজে চলার পথে বন্ধুর প্রয়োজন হয়। সামাজিক সম্পর্ক তৈরীতে বন্ধুত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুত্বের কল্যাণে। এ কারণে কার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং কাদের বর্জন করতে হবে এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআ'লা আমাদের পথ দেখিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ
ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমোদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।
নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।”
সূরা আল-হুজুরাতঃ ১৩
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
“আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনজাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।
সূরা আত তওবাঃ ৭১
أَبُو مَعْمَرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ حَدَّثَنَا أَيُّوبُ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَمَّا الَّذِي قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ خَلِيلاً لاَتَّخَذْتُهُ وَلَكِنْ خُلَّةُ الإِسْلاَمِ أَفْضَلُ أَوْ قَالَ خَيْرٌ فَإِنَّهُ أَنْزَلَهُ أَبًا أَوْ قَالَ قَضَاهُ أَبًا
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি এ উম্মাতের কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে তাকে [আবূ বাকর (রাঃ)]-কে গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী বন্ধুত্বই সবচেয়ে উত্তম।’’ أَفْضَلُ শব্দ বলেছেন না কি خَيْرٌ এ ব্যাপারে রাবীর সন্দেহ আছে। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁকে (ইবরাহীম আ. কে) পিতৃ মর্যাদা দিয়েছেন অথবা তাঁকে পিতার আসনে বসিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮২) বুখারীঃ ৬৭৩৮
বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্বঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।”
সূরা আল-মায়েদাঃ ৫১
وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِنْ أَوْلِيَاء ثُمَّ لاَ تُنصَرُونَ
“আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।”
সূরা হূদঃ ১১৩
নবী করীম (ﷺ) সৎ সঙ্গী গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন, এবং অসৎ সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে তাকিদ দিয়েছেন।
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’
বুখারী ২১০১, ৫৫৩৪, মুসলিম ২৬২৮, আহমাদ ১৯১২৭, ১৯১৬৩, রিয়াদুস সলেহিনঃ ৩৬৭
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। (সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩, আত-তিরমিযী: ২৩৭৮)
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَجُلاً، سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ السَّاعَةِ، فَقَالَ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ " وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا ". قَالَ لاَ شَىْءَ إِلاَّ أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم. فَقَالَ " أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ ". قَالَ أَنَسٌ فَمَا فَرِحْنَا بِشَىْءٍ فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ ". قَالَ أَنَسٌ فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ بِحُبِّي إِيَّاهُمْ، وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ.
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি (পাথেয়) সংগ্রহ করেছ? সে বলল, কোন কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কে (আন্তরিকভাবে) মহব্বত করি। তখন তিনি বললেন, তুমি (কিয়ামতের দিন) তাঁদের সাথেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি মহাব্বত কর।
আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মহব্বত করি এবং আবূ বকর ও উমর (রাঃ) কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার মহব্বতের কারণে তাদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল করতে পারিনি।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ৩৪২৩
وَعَنْ أبي ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ‘আমলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা, আর আল্লাহর জন্যই কারো সাথে ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করা।
আবূ দাঊদ ৪৫৯৯, য‘ঈফুত তারগীব ১৭৮৬, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ৩২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَليَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح، وَقالَ الترمذي: حديث حسن
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর হয়। অতএব তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’’ (আবূ দাউদ, তিরিমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
তিরমিযী ২৩৭৮, আবূ দাউদ ৪৮৩৩, আহমাদ ৭৯৬৮, ৮২১২, রিয়াদুস সলেহিনঃ ৩৭১
খারাপ বন্ধুত্বের পরিণতিঃ
কিয়ামতের দিন অসৎ বন্ধুর জন্য আফসোস করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا
‘হায়! আমার দুর্ভোগ! আমার আফসোস! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ বাণী (কুরআন) পৌঁছার পর; আর শয়তান হল মানুষের জন্যে মহাপ্রতারক।’
সূরা আল-ফুরক্বানঃ ২৭-২৮
يَوْمَ لا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
সেদিন কোন বন্ধু অপর বন্ধুর কোনই কাজে আসবে না আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
সূরা আদ্-দুখানঃ ৪১
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلا شَفِيعٍ يُطَاعُ
পাপিষ্ঠদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না আর কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।
সূরা আল-মুমিনঃ ১৮
وَلا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا
আর (সেদিন) অন্তরঙ্গ বন্ধু অন্তরঙ্গ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না।
সূরা আল-মা‘আরিজঃ ১০
الأخِلاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلا الْمُتَّقِينَ
সেদিন বন্ধুগণ হবে একে অপরের শত্রু তবে মুত্তাকীরা (আল্লাহভীরুরা) ছাড়া।
সূরা আয্-যুখরুফঃ ৬৭
وَإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
আর নিশ্চয় যালেমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ হলেন মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরুদের) বন্ধু।
সূরা আল-জাসিয়াঃ ১৯
ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য ও নির্বাচনে করণীয়ঃ
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا(7)
فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا(8)
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا(9)
وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا(10)
“শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত
করেছেন, তাঁর, অতঃপর তাকে তার
অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।”
সূরা আশ-শামসঃ ৭-১০
لاَّ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُوْنِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللّهِ فِي شَيْءٍ
‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’
সুরা আল-ইমরানঃ ২৮
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ(118)
هَا أَنْتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ(119)
إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ(120)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত
অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না- তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের
আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।”
সূরা আল-ইমরানঃ ১১৮-১২০
تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءهُمْ أَوْ أَبْنَاءهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُوْلَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُوْلَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র,
ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”
সূরা আল-মুজাদিলাঃ ২২
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’
সুরা কাহাফঃ ২৮
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
সূরা আত্-তাওবাহঃ ৭১
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
তোমাদের বন্ধু কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর কাছে অবনত হয়। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তবে নিশ্চয় সেটি আল্লাহর দল আর তারাই বিজয়ী হবে।
সূরা আল-মায়িদাহঃ ৫৫-৫৬
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
أَلاَ إِنَّ آلَ أَبِي - يَعْنِي فُلاَنًا - لَيْسُوا لِي بِأَوْلِيَاءَ إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللَّهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ
সাবধান! অমুক বংশের লোকেরা আমার বন্ধু নয়। বরং আল্লাহর এবং নেককার মুমিনগণ হলেন আমার বন্ধু। (মুসলিম: ৪০৭)
বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতাবন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ নিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (তিরমিজি)
সুতরাং সত্যবাদী বিশ্বস্তদের বন্ধু বানান কারণ বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা হলো সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার চাবিকাঠি। সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরা আপনাকে আঘাত দেবে না। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদী ও অবিশ্বস্ত বন্ধু আপনার জন্য খামোখাই অকল্যাণ ডেকে আনবে।
হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
হযরত ইমাম জাফর আস-সাদিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।’
হযরত ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। আর তা হলো- ‘বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া, পাপাচারী না হওয়া, বেদআতি না হওয়া এবং দুনিয়াসক্ত না হওয়া।’
পরিশেষে...বন্ধুত্ব হতে হবে পরকালের কল্যাণে। আর পরকালের কল্যাণে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্ধু নির্বাচনে একজন মানুষ হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ঈমানদার। যা প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে (কাউকে) ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।’ (আবু দাউদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব লাভে কুরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তাআলা যেন যেন মুসলিম উম্মাহকে সৎ হওয়ার এবং সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার এবং আল্লাহর ওয়াস্তে বন্ধুত্ব স্থাপন করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
দুনিয়াতে চলতে ফিরতে কত লোকের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। কত লোক আমাদের আপন হয়ে যায়। কিন্তু এ সম্পর্ক কিছু সময়ের জন্যে। কাল কেয়ামতের সময় কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারবে না। দুনিয়াতে যাদের বন্ধু বানিয়েছেন আপন বানিয়েছেন তারা কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবে না। এমনকি আপনার বাবা মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী কেউ না। করব আর হাশরের ময়দানে বন্ধু কেউ হবে না। একটু ভাবুন আমরা কত সৌভাগ্যবান, আল্লাহ আমাদের কুরআন দিয়েছেন শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত করেছেন, মুসলিম করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার কেউ লাগবে না বরং কুরআন নিজেই আপনার বন্ধু হবে কবর আর হাশরের মাঠে। এর চাইতে বড় সাহায্য আর কে করতে পারবে? মুহাম্মদ (সাঃ) এর শাফায়েত কপালে জুটবে তার আর কি চাই? এই বন্ধু কি করে পাবো হাশরে যদি দুনিয়াতে এদের বন্ধু না বানাই? তাই বলছি প্রিয় পাঠকগণ, মৃত্যুর শেষ দিনটি পর্যন্ত আমার চেষ্টা করি ও আমল করি যেন নিয়মিত সূরা মূলক পথ করি এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাহ মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালন করি. আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রয়োজন, তেমনি সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির। কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে চলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিই এমন যে কোনো মানুষ একাকী থাকতে চায় না। সমাজের অন্য সবার সঙ্গে প্রীতির মেলবন্ধনে জড়িয়ে থাকতে আগ্রহী। এই পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মায়াজাল মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের আবহ সৃষ্টি করে। একেক জনের পেশা একেক রকম। তাই সমাজে একজনকে আরেকজনের প্রয়োজন পড়ে। এটা আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত। কেননা সমাজবদ্ধতার প্রশ্নে মানুষ একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সঠিকভাবে যথার্থ বন্ধু নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে মানুষ তার সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করে তোলে। এই বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি।
বন্ধু নির্বাচন: মানবজীবনে আদর্শ বন্ধু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন অতীব জরুরি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বন্ধুত্ব গ্রহণ এবং এর মর্যাদা সম্পর্কে বহু বাণী উল্লিখিত হয়েছে। আসলে যে কাউকে বন্ধু বলা যায় না, বন্ধু বানানো যায় না। সত্যবাদী, নামাজি, দ্বীনদার ও পরোপকারী ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করা উচিত।
এ জন্য কোরআনে বন্ধু নির্বাচনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঘোষিত হয়েছে-‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। ‘ (সুরা কাহাফ : ২৮)
বন্ধু নির্বাচনে কেমন ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবে-এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে আরো সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে-‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। ‘ (সুরা তাওবা : ১১৯)
অন্যদিকে বন্ধু নির্বাচনে জোরালো নির্দেশনা প্রদান করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-‘মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী নির্বাচন করবে না। ‘ (তিরমিজি)
কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। ‘ (সুরা আলে ইমরান : ২৮)
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি রহ. বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। তা হলো-‘বুদ্ধিমত্তা ও সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া এবং পাপাচারী, বেদআতি ও দুনিয়াসক্ত না হওয়া। ‘ হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক রহ. মুসলিম মিল্লাতকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক করে বলেছেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি। ‘ বন্ধু মনোনয়নে হজরত আলী রা.-এর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে। ‘ (দিওয়ানে আলী)
এ প্রসঙ্গে দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন-‘বন্ধুত্ব করার সময় খুবই ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে; কিন্তু যখন বন্ধুত্ব হয়ে যায় তখন তা দৃঢ়তর ও স্থায়ী করো। ‘
হঠাৎ করে কারো সাথে পরিচিত হবার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনোরকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে। অনেক ইন্টারনেট বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব সহজেই অনুমান করা যায়। যাই হোক, এই যে আমরা বিচার বিবেচনার কথা বললাম, ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে অর্থাৎ একজন ভালো বন্ধুর গুণাবলী কী ইসলামের দৃষ্টিতে সেদিকে একবার নজর দেওয়া যাক।
জগদ্বিখ্যাত মরমী কবি আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি রহ. এ সম্পর্কে লিখেছেন
অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো যতোটা পারো!
সে যে বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর আরো,
দুষ্ট সাপ শুধু আঘাত করে তোমার প্রাণের পর,
অসৎ বন্ধু ছোবল মারে প্রাণের সাথে ঈমানের পর।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য : ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য হলো বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সব সময় আস্থা রাখা যায় কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুলত্রুটি থেকে ফিরিয়ে রাখে। আলী (আ.) বলেছেন, বিবেকবান বন্ধুর সাহচর্য অন্তরাত্মাকে প্রাণচাঞ্চল্য দান করে। পক্ষান্তরে অজ্ঞ এবং মূর্খ বন্ধু কারও কোনো উপকার তো করেই না বরং তার কথাবার্তা আর আচার-আচরণ অন্যদের বিরক্তি আর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধুত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হচ্ছে অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদেও বন্ধুত্ব অটুট রাখা। লোকমান হাকিম বলেছেন, ‘প্রয়োজনের মুহূর্ত ছাড়া বন্ধুকে চেনা যায় না।’ একজন ভালো বন্ধু পাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে কোনো ধরনের স্বার্থ কিংবা প্রাপ্তির চিন্তা মাথায় না রাখা।
আমাদের উচিত হবে জীবনের এই উজ্জ্বল সময়ে যাকে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাত্র জীবনে বন্ধু হওয়া উচিত, সৎ, বুদ্ধিমান, মেধাবী, ধৈর্যশীল, চরিত্রবান, ধার্মিক, সুন্দর মনের অধিকারী, পরোপকারী ও নিরলস। একজন ভালো বন্ধুই পারে পাল্টে দিতে আপনার জীবন, পরিবারের জীবন এমনকি সমগ্র জাতির জীবন। এই হোক বন
বন্ধুত্ব - আরিফ আজাদ
দ্বীনে প্রবেশের শুরুতে আমার সামনে দুটো সার্কেল এসে হাজির হয়। হাজির হয় বলাটা ঠিক নয় আসলে, দুটো ভিন্ন ধারার সার্কেলের সাথে মিশবার সুযোগ তখন আমার সামনে আসে। এই দুই সার্কেলের যেকোন একটিকে বেছে নিয়ে, জীবনের বাকি পথ আমাকে পাড়ি দিতে হবে।
দুটো সার্কেলের প্রথম সার্কেলের সকলে নামায-কালাম পড়েন, দ্বীন নিয়ে ফিকির করেন, কথা-বার্তাও বলেন, দ্বীন নিয়ে কাজও করেন, কিন্তু একইসাথে আমি আবিষ্কার করলাম— তারা বক্স অফিস হিট করা মুভি না দেখেও থাকতে পারেন না। তারা ওমর মুখতার হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন অন্তরে, তবে মোশাররফ করিমের ঈদের নাটক না দেখলে তারা কেমন যেন শান্তি পান না। দ্বীনের বাহ্যিক ব্যাপারে অনেকবেশি সিরিয়াসনেস আমি তাদের ভিতর দেখেছি ঠিক, কিন্তু দ্বীনের ভেতরে ঢুকে, নিজের জীবনে দ্বীন দ্বারা যে মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি, আমার মনে হয়েছে, তা থেকে তারা খানিকটা বিচ্যুত কিংবা পিছিয়ে আছে।
দ্বিতীয় সার্কেলটা মা শা আল্লাহ একেবারে অন্যধারার। আমি তাদেরকে দ্বীনের ভিতরের এবং বাইরের— সকল ব্যাপারে সমান সিরিয়াস হতে দেখেছি। তাদের আলাপে কখনো মুভির কথা থাকে না, তারা মোশাররফ করিমের ভক্তও নয়। নাটক-সিনেমার জন্যও তাদেরকে উদগ্রীব হয়ে থাকতে দেখিনি কোনোদিন। তারা গান তো শুনেই না, বাদ্য-বাজনা সহ যেসব ইসলামি সঙ্গীত বাজারে আছে, তা থেকেও তাদেরকে সর্বদা দূরে থাকতে দেখেছি। পর্দার ব্যাপারে তারা একবিন্দু ছাড় দেয় না।
আমার মনে হলো— এই দুই সার্কেলের মাঝে শেষোক্ত সার্কেলটাই আমাকে দ্বীনের পথে বেশি এগুতে সাহায্য করবে এবং নিজেকে 'আরো ভালো মুসলিম' হিশেবে গড়ে তুলতে আমাকে প্রথম সার্কেলটার তুলনায় দ্বিতীয় সার্কেলটা সাহায্য করতে পারে অনেক বেশি। ফলে, দ্বীনের পথে হাঁটবার জন্য আমি দ্বিতীয় সার্কেলটাকে বেছে নিলাম এবং তাদের সাথেই চলতে ফিরতে শুরু করলাম।
[২]
আপনি বলতে পারেন, 'আপনার এক বন্ধু নাহয় মুভি দেখে, তার সাথে মিশলে যে আপনিও মুভি দেখতে শুরু করবেন, তা কেনো? নিজের ওপর আপনার তো এটুকু নিয়ন্ত্রণ থাকা চাই'।
আপনার এই যুক্তিটার সাথে আমি আসলে জোরালোভাবে দ্বিমত করি, এবং বিশ্বাস করি— এটা যতোখানি না যুক্তি, তারচে বেশি ইবলিশের ওয়াসওয়াসা।
আসলে, ঈমান আর দ্বীন পালন জিনিস দুটো এমন যে— এগুলোর ব্যাপারে ইবলিশকে বিন্দুমাত্র সুযোগও দেওয়া যাবে না। আপনার মুভিখোর, কিন্তু নামাজী বন্ধুটার সাথে মিশলে আপনি হয়তো একদিন, দু'দিন, তিনদিন মুভি না দেখে থাকতে পারবেন, কিন্তু এরইমধ্যে ইবলিশ আপনাকে এমনভাবে ওয়াসওয়াসা দেওয়া শুরু করবে যে— একটা সময় আপনি ভাবতে শুরু করবেন, 'যাক, এই মুভিটার এতো নাম করছে ওরা, আমির খান নাকি একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছে! দেখে ফেলি একটু। তবে এটাই শেষ। যতো-ই নাম করুক, আর কোনোদিন আমি মুভি-মুখী হবো না'।
অথবা, কোন নাটক কিংবা এমন ড্রামা সিরিজ যা আপনি দেখতে না চাইলেও, বন্ধু মহলের সকলে সোৎসাহে দেখছে বলে আপনারও একবার মনে হতে পারে— 'একবার দেখেই ফেলি নাহয়'।
এভাবে আপনি ইবলিশের ফাঁদে পা দিয়ে দেন এবং আস্তে আস্তে ওই দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে যান। আপনি নামাজ পড়েন, যিকির আযকার করেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, দ্বীন নিয়েও ভাবেন। তবে একইসাথে আপনি মুভিও দেখেন, গানও শুনেন, নাটক দেখাও বাদ দিতে পারেন না।
কোন মুভি-খোর, নাটক-গান নিয়ে থাকা দ্বীনি বন্ধুটার সাথে মিশে অন্তত আর যা-ই হোক, ইবলিশকে এই সুযোগটা দিতে আমি রাজি নই। নিজের দ্বীনকে হেফাযতের জন্য এ-ধরণের প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে এমন বন্ধুর সাথে নিয়মিত চলাফেরা, ঘোরাফেরা, উঠা-বসা বাদ দিতেই বা কমিয়ে আনতেই আমি বেশি আগ্রহী।
[৩]
যারা দ্বীনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়, দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে এমন লোকদের সাথেই কেনো আপনার মেশা উচিত সে ব্যাপারে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর বেশ সুন্দর একটা কথা আছে। তিনি বলেছেন—
'দ্বীনদারদের সাথে মিশলে আপনার ছয়টা উপকার হবে।
এক. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতরে দ্বীন নিয়ে থাকা সন্দেহ দূর করে আপনার ঈমানকে আরো মজবুত করবে।
দুই. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতর থেকে রিয়া দূর করে, তাকওয়া বাড়িয়ে দেবে।
তিন. তাদের সঙ্গ পেলেই আপনার ভেতরে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত হবে।
চার. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতর থেকে দুনিয়ার আসক্তি কমিয়ে, আপনাকে অধিক আখিরাত-মুখী করে দেবে।
পাঁচ. তাদের সাথে থাকলে আপনি উদ্ধ্যত না হয়ে বরং অধিক কোমল আর বিনয়ী হবেন।
ছয়. তাদের সঙ্গ আপনাকে মন্দ ধারণা থেকে বাঁচিয়ে, সু-ধারণার দিকে ধাবিত করাবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর বর্ণনা করা এই লিটমাস টেস্ট দিয়ে যদি আমি আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী-সাথী নির্ধারণ করতে যাই, আমাকে তাহলে মোটাদাগে কয়েকটা জিনিস দেখতে হবে-
১. আমার বন্ধুটাকে দেখলে আমার কি আখিরাতের কথা স্মরণে আসে নাকি দুনিয়াবি বা গতানুগতিক ধারণাই মনে আসে?
২. সে কী আমাকে আল্লাহর কথা বেশি স্মরণ করায়, না দুনিয়ার কথা?
৩. সে কি এমনকিছুতে আসক্ত যা তার এবং আমার— দুজনের দ্বীনের কোন উপকারেই আসবে না? যেমন- মুভি দেখা, গান শোনা, অহেতুক আড্ডাবাজি ইত্যাদি।
৪. সে কি অধিকবেশি নেতিবাচক মনোভাবের? মানুষের ব্যাপারে কটু কথা, কটু-বাক্য প্রয়োগে সে কি লাগামছাড়া?
মোদ্দাকথা, তাকে দেখলে আমার কি অধিক বেশি দ্বীনে ঝুঁকতে আগ্রহ জাগে?
যদি তাকে দেখলে আমার মনে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত না হয়, যদি তার আখলাক আমাকে মুগ্ধ না করে, যদি তার আমানতদারিতায় আমি ভরসা না পাই, যদি তার দ্বীনচর্চা আমাকে দ্বীনের ব্যাপারে আরো উৎসাহি না করে— তাহলে নিশ্চিতভাবে সে আমার ভালো বন্ধু হওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য নয়। তার সঙ্গ ছেড়ে আরো ভালো সঙ্গ, আরো ভালো সার্কেল খুঁজে নেওয়া তখন আমার জন্য অতীব জরুরি।
[৪]
আসলে, নিজের ঈমানটাকে হেফাযতের উদ্দেশ্যে, নিজের তাকওয়াকে ঠিক রাখতে, নিজের দ্বীন চর্চাকে দিনের পর দিন উন্নত করতেই আমি এমন সার্কেল পছন্দ করি যাদের তাকওয়া থেকে, আমল থেকে, কাজ-কর্ম সহ সবকিছু থেকে প্রতিনিয়ত আমি কিছু না কিছু শিখতে পারবো। যাদের দেখলেই মনে হবে— ইশ! তার মতো যদি আমলদার হতে পারতাম! এমন কাউকে দেখলেই দৌঁড়ে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, 'তুমি কি আমার বন্ধু হবে?'
ভালো ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।
সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ
আলবার্ট আইনস্টাইন এবং তার ড্রাইভার
আইনস্টাইনের যিনি ড্রাইভার ছিলেন,তিনি একবার আইনস্টাইনকে বললেন– “স্যার, আপনি প্রতিটি সভায় যে ভাষণ দেন সেগুলো শুনে শুনে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।” আইনস্টাইন তো অবাক!!! উনি বললেন– “বেশ, এর পরের মিটিংএ যেখানে যাবো তারা আমাকে চেনেন না, তুমি ওখানে আমার হয়ে ভাষণ দিয়ে দিও। আর আমি ড্রাইভার হয়ে বসে থাকব।”
যেমনি বলা তেমনি কাজ। পরের দিন সভায় তো ড্রাইভার উঠে গেলেন স্টেজে। হুবহু আইনস্টাইন এর ভাষণ গড় গড় করে বলে গেলেন। উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা তুমুল করতালি দিলেন। এরপর তারা ড্রাইভারকে আইনস্টাইন ভেবেই গাড়িতে পৌঁছে দিতে এলেন।
সেই সময়ে একজন অধ্যাপক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন– “স্যার, ঐ আপেক্ষিক তত্ত্বের যে সংজ্ঞাটা বললেন, সেটা আরেকবার সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেবেন?” আসল আইনস্টাইন দেখলেন এ তো মহাবিপদ! এবার ড্রাইভার ধরা পড়ে যাবে। কিন্তু তিনি ড্রাইভারের উত্তর শুনে তাজ্জব বনে গেলেন।
ড্রাইভার উত্তর দিলো– “এই সহজ জিনিসটা আপনার মাথায় ঢোকেনি? আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন, সে বুঝিয়ে দেবে।”
বিঃদ্রঃ- জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সাথে চলাফেরা করলে আপনিও জ্ঞানী হয়ে উঠবেন। আপনি যেমন মানুষের সাথে মিশবেন তেমনই আপনার চরিত্র গড়ে উঠবে।
এই জন্যই বলে– “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস। অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
সমাজে থাকতে হলে নরমালি আমাদের সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে উঠা-বসা করা লাগবেই। তার মধ্যে আমাদের কিছু বিশেষ মানুষ থাকে যাদের সাথে বেশির-ভাগ সময় থাকা হয় কথা হয় এদেরকে আমরা বন্ধু বা সহচর বলি। এই সহচর বাছাই করে গ্রহণ করাটা আমাদের যুবকদের জন্য জরুরী কারণ, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
ইসলামে ভালো বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব
বন্ধুর মতো আপনিও হয়ে উঠবেন
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে” এই বাক্যের গভীরতা অনেক। কারণ, সঙ্গের সাথে থাকতে থাকতে আপনিও সঙ্গীর মতোই হয়ে উঠবেন। সঙ্গীর আচার-ব্যবহার সব আপনার মাঝেই ফুটে উঠবে। আপনার বন্ধু যদি অসৎ হয় আপনি ঠিক আপনার বন্ধুর সব ব্যবহারে প্রভাবিত হতে থাকবেন। এবং নিজেই বন্ধুর খারাপ চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাবেন। বন্ধু যদি কোন নেশা করে ধীরে ধীরে আপনিও সেই নেশায় আসক্ত হয়ে উঠবেন। এরকম ঘটনাই সমাজে সবচেয়ে বেশি।
যদি কেউ মন্দ লোকের সাথে উঠা-বসা করে অবশ্যই মন্দ লোকের প্রভাব পড়বে উঠা-বসা করা ব্যক্তির উপর। রাসূল সঃ বলেছেন যে, “মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে। [তিরমীযী-২৩৭৮] এর মানে আমাদের বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমরা আমাদের বন্ধুর আচার-আচরণের প্রভাবে প্রভাবিত হই।
অন্য একটি হাদিসে রাসূল সঃ বলতেছেন, আবু দারদা ও মূসা আশআরী রাঃ হতে বর্ণিত, “রাসূল সঃ বলেছেন, নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, একজন আতর বহনকারী ও অন্যজন কামারের ন্যায়। যে আতর বহনকারী সে তোমাকে আতর দিবে। অথবা তুমি খরিদ করবে। অথবা তুমি সুঘ্রাণ পাবে। যে কামার সে তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে গন্ধ পাবে।” [মুসলিম ২৬২৮]
রাসূল সঃ আমাদের কত সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন এই হাদিসের দিকে আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি। ভালো বন্ধু সহচর হলে তার কাছ থেকে কিছুনা কিছু ভালো জিনিস পাবো, আর খারাপ বন্ধু গ্রহণ করলে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নেই।
এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়েই সাথী গ্রহণ করা উচিত।
খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার উপায়
সালাফদের চোখে অসৎ সঙ্গ: সহচর গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বসরী ব্যক্তিগণ ছিলেন খুবই সতর্ক। তারা আল্লাহর জন্যই বন্ধু গ্রহণ করেছেন ও ত্যাগ করেছেন।
ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বিহ রহ. বলেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ের ওপর আমলের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখো—
(১) প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকো।
(২) অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো।
(৩) আত্মমুগ্ধ হওয়া বিরত থাকো।
[বইঃ সালাফদের চোখে দুনিয়া]
লক্ষ্য করুন এখানে ৩ টি জিনিসের একটি অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করার ব্যাপারে৷ এখানে অন্য কোন বিষয় দিতে পারতেন কিন্তু উনি অসৎ সাথী ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিশ্চয় অসৎ সঙ্গ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অকল্যাণকর সে জন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ নসিহত দিয়েছিলেন।
ভালো বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব
যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে। তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে তারা তাদের সংশ্রয় থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো’আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐসব ভালো লোকদের আমলে পৌছাবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেছেন, “আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম আর তারা এমন এক সম্প্রদায়। তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না।” [মুসলিম-২৬৮৯]
সৎ লোক নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করা আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ বলেন, “আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে”।(বর্ণনায় মালেক ও ইবনু আব্দিল বার ও মুনাযিরি হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেন) মুসনাদে আহমদ ৫/২৩৩ নং, ২২০৮৩]
হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সঃ বলেন, “একজন মু’মিন অপর মু’মিনের আয়না স্বরুপ”। [আবু দাঊদ-৪৯১৮]
উপরোক্ত আলোচনায় উল্লেখিত কুরআন ও হাদীসের কথা থেকে একথা স্পষ্ট যে, সৎ সঙ্গে দ্বীনের পথে চলা সহজ। ঠিক তেমনি অসৎ সঙ্গে চলা কঠিন। এবং কখনো কখনো এর পরিণাম ভয়াবহ। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভের জন্য সৎ সঙ্গ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শেষ কথা
জীবনের যথার্থ ও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সৎ সাহচার্যের বিশেষ প্রয়োজন। সৎসঙ্গ মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণতার দিকে উন্নীত করে। পক্ষান্তরে, অসৎ সঙ্গ তার ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা, সুনাম এমনকি সাফল্যকেও ধ্বংস করে। তাই আসুন প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা একমাত্র আল্লাহর জন্যই বন্ধু গ্রহণ করি এবং আল্লাহর জন্যই বন্ধু ত্যাগ করি।
তাছাড়াও আমরা অনেক quatation পড়ে থাকি।
একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।
কিন্তূ আজ আমাদের স্মার্ট ফোন ভালো বন্ধু।
ধরুন আপনাকে অন্ধকার একটা কুঠুরিতে তিনদিন থাকার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হল। সেই চ্যালেঞ্জের একটাই শর্ত, আপনার কাছে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট থাকবে না। পারবেন না হয়তো সেই চ্যালেঞ্জ কমপ্লিট করতে! কিন্তু শর্ত তুলে দিয়ে যদি বলা হয়, অন্ধকার ঘরে থাকবেন স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সমেত! তা হলে তো এমন চ্যালেঞ্জের কোনও মানেই নেই, তাই না! টাস্ক অতি সহজ হয়ে যাবে। আসলে স্মার্টফোন এখন আমাদের প্রিয় বন্ধু। স্মার্টফোন এখন আমাদের গল্পের বই। স্মার্টফোন আবার বন্ধু খোঁজার মাধ্যমও।
কিন্তু Mobile addiction থেকে বাঁচতে হবে, আমাদের book addiction হতে হবে। তাহলে না ধোঁকা দেওয়ার বন্ধু পাবে।
বাঘের বাচ্চা যদি শিয়ালের পরিবেশে থাকে তাহলে বাঘের স্বভাব গড়ে উঠবে না যদিও সে জন্মগতভাবে বাঘই বটে।
খারাপ লোকদের সাথে তুমি সময় কটায়না, কারণ যদি খারাপ লোকদের সাথে সময় বায় করো কাটাও তাহলে তারা তোমাকে এমন ভাবে কেটে ফেলবে ।
তোমাকে বছরের পর বছর লেগে যাবে আবার একতৃত হতে।
আবার অনেক নিজেদের মধ্যে অহংকার কিংবা কথা কাটা কাটি হয়
অহংকার কিসের কর,
আমি যে জায়গা থেকে এসেছি। তুমিও সে জায়গা থেকে এসেছো।
আমিও চলে যাবো ,তুমিও চলে যাবে।
তুমি এসিতে চরে যে সময়ে যাও সেখানে আমি স্লিপারে একই সময়ে যাবো।
টাকার অহংকার করো খালিহাতে যাবে আমিও খালি হাতে যাবো।
তুমি লক্ষ টাকার মোবাইল যে নেটওর্য়াক পাও আমি এক হাজার টাকার মোবাইল সে নেটওর্য়াক পাই।
তোমার ও জন্য তিন টুকরো কাফন হবে আমার জন্য তিন টুকরো কাফন হবে।
পানির সাথে রং মেশাতে কিছু সেকন্ড লাগে কিন্তু সে রং বানাতে কিছু দিন লেগে যায়।
কাপড় রঙিন করতে হয়তো রঙের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু জীবন রঙিন করতে রঙের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় কিছু ভাল বন্ধুর আর কিছু আপনজনের।
هو الذي بعث في الاميین
✓রসূলের প্রতি আনুগত্য 'Ayat
✓وأبي هريرة -رضي الله عنهما- مرفوعاً: «لا يُؤْمِنُ أحدُكم حتى أَكُونَ أَحَبَّ إليه مِن وَلَدِه، ووالِدِه، والناس أجمعين».
✓উমর ফারুক হাদীস
✓قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي
مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ
✓নবীর প্রতি আবু বকরের ভালোবাসা
আসলে সুন্নাত টা বুঝলাম না।
তো কেমন নবীর আদর্শ
لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة
كان خلقه القران
وما كان ينطق عن الهوى....
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
এটা তখনই সম্ভব যখন তুমি আল্লাহকে স্মরণ করবে , ভয় করবে আর এটা একমাত্র সম্ভব যখন তুমি ফজরের সময় প্রথম কাতারে দাড়াবে, ফজরে চাদর উড়ে ঘুম দাও।
✓ শৈশবে ইমাম হাসান আল-বান্না ফযরে
✓ শিবিরের কর্মী ফজরের নামাজ
___________________________________
یٰوَیۡلَتٰی لَیۡتَنِیۡ لَمۡ اَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِیۡلًا ﴿۲۸﴾
✓পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য.......সমাজে থাকতে হলে নরমালি আমাদের সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে উঠা-বসা করা লাগবেই। তার মধ্যে আমাদের কিছু বিশেষ মানুষ থাকে যাদের সাথে বেশির-ভাগ সময় থাকা হয় কথা হয় এদেরকে আমরা বন্ধু বা সহচর বলি।
জেনে রেখো বন্ধু। আজ যাকে তুমি ভালোবাসবে কাল কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে তারই সঙ্গে অবস্থান করতে হবে। যদি কোন খেলোয়াড়কে ভালোবাস, তাহলে সেই খেলোয়াড়ের সাথে........
আজকে আমাদের বন্ধু
ফার্স্ট জানুয়ারি
জন্মবার্ষিকী, থার্টিফার্স্ট নাইট, রেস্তোরাঁয় নবাবী ট্রিট আর ঘোরাঘুরি। নেতার সভা সমাবেশ, অন্দরমহলে কুয়াশায় আছে নর্তকি। হামলা, মামলা, প্রশাসনিক জটিলতা! চিন্তা নাই বন্ধু আমি তো পাশেই আছি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সেদিন কোনো বন্ধু অপর বন্ধুর কোনোই কাজে আসবে না আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
✓ কিয়ামতের দিন অসৎ বন্ধুর জন্য আফসোস করতে হবে।
يَوْمَ لا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلا شَفِيعٍ يُطَاعُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।
এর মানে কি
"সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে”
কষ্টিপাথরের স্পর্শে লোহা একদিন সোনায় পরিণত হয়ে যায়।
✓ আপনি বলতে পারেন, 'আপনার এক বন্ধু নাহয় মুভি দেখে.....
✓ সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ
আলবার্ট আইনস্টাইন এবং তার ড্রাইভার
বাঘের বাচ্চা যদি শিয়ালের পরিবেশে থাকে তাহলে বাঘের স্বভাব গড়ে উঠবে না যদিও সে জন্মগতভাবে বাঘই বটে।
✓ আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়।
✓ এক ব্যক্তি অন্য এক বস্তিতে তার এক (দ্বীনী) ভায়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হল।
✓ এ কথা বাস্তব যে, শুধু মানুষের মাঝেই নয়, পশু-পক্ষীর মাঝেও এমন ‘জাতীয়তাবাদ’ লক্ষ্য করা যায়।
মালেক বিন দীনার বলেন, একদিন একটি কাককে একটি পায়রার সঙ্গে বসে থাকতে দেখে আমি অবাক হলাম....
মানুষের মাঝেও তাই......
✓ একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।
কিন্তূ আজ আমাদের স্মার্ট ফোন ভালো বন্ধু।
ধরুন আপনাকে অন্ধকার একটা কুঠুরিতে তিনদিন থাকার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হল......
কিন্তু Mobile addiction থেকে বাঁচতে হবে, আমাদের book addiction হতে হবে।
✓ বেশী বেশী করে ইলম হাসিল করতে হবে, allah se kare dur
✓ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি (পাথেয়) সংগ্রহ করেছ? সে বলল, কোন কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কে (আন্তরিকভাবে) মহব্বত করি। তখন তিনি বললেন, তুমি (কিয়ামতের দিন) তাঁদের সাথেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি মহাব্বত কর।
আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মহব্বত করি এবং আবূ বকর ও উমর (রাঃ) কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার মহব্বতের কারণে তাদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল করতে পারিনি।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ৩৪২৩
কাদের সাথে বন্ধুত্ব করব
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
তোমাদের বন্ধু কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর কাছে অবনত হয়।
দুনিয়াতে চলতে ফিরতে কত লোকের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। কত লোক আমাদের আপন হয়ে যায়। কিন্তু এ সম্পর্ক কিছু সময়ের জন্যে। কাল কেয়ামতের সময় কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারবে না। দুনিয়াতে যাদের বন্ধু বানিয়েছেন আপন বানিয়েছেন তারা কেউ আপনাকে সাহায্য করতে আসবে না। এমনকি আপনার বাবা মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী কেউ না। করব আর হাশরের ময়দানে বন্ধু কেউ হবে না। একটু ভাবুন আমরা কত সৌভাগ্যবান, আল্লাহ আমাদের কুরআন দিয়েছেন শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত করেছেন, মুসলিম করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার কেউ লাগবে না বরং কুরআন নিজেই আপনার বন্ধু হবে কবর আর হাশরের মাঠে। এর চাইতে বড় সাহায্য আর কে করতে পারবে? মুহাম্মদ (সাঃ) এর শাফায়েত কপালে জুটবে তার আর কি চাই? এই বন্ধু কি করে পাবো হাশরে যদি দুনিয়াতে এদের বন্ধু না বানাই? তাই বলছি প্রিয় পাঠকগণ, মৃত্যুর শেষ দিনটি পর্যন্ত আমার চেষ্টা করি ও আমল করি যেন নিয়মিত সূরা মূলক পথ করি এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাহ মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালন করি. আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ সেদিন তার আরশের ছায়া দান করবেন, যেদিন তার ওই ছায়া ছাড়া আর অন্য কোনো ছায়া থাকবে না; তন্মধ্যে সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর ওয়াস্তে বন্ধুত্ব স্থাপন করে এবং এই বন্ধুত্বের ওপরেই তারা মিলিত হয় ও তারই ওপর চিরবিচ্ছিন্ন (পরলোকগত) হয়।’
হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ বলেন, “আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে”।
পানির সাথে রং মেশাতে কিছু সেকন্ড লাগে কিন্তু সে রং বানাতে কিছু দিন লেগে যায়।
কাপড় রঙিন করতে হয়তো রঙের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু জীবন রঙিন করতে রঙের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় কিছু ভাল বন্ধুর আর কিছু আপনজনের।
Social media তে বন্ধুত্ত্ব
No comments