New Posts

সূরা আম্বিয়া তফসীর ১-৪

 


সূরা আম্বিয়া তফসীর ১-৪

আমরা যদি সুরা তাকাসুর দেখতে যায় তাহলে আমরা সেখানে দেখব আল্লাহতালা এই প্রথম আয়াতেরই ব্যাখ্যাটা সুন্দরভাবে আল্লাহতালা তুলে ধরেছেন।

আমরা কি চায়না রসুলের সাথে থাকি আমরা কি চাই না সাহাবীদের সাথে থাকি আল্লাহ আমরা কি চাই না আল্লাহর রাসূল আমাদের জন্য সেই কেয়ামতে সে হাশরের মাঠে আমাদের জন্য সুপারিশ করুক আমরা কি চাই না সেই হাশরের মাঠে আমলনামা ডান হাতে পায়। আমরা কি চাই না জান্নাত বাসী হতে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে ভাইয়েরা আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর দেওয়া পথে চলতে হবে রসুলের দেওয়া পথ অনুসরণ করতে হবে না হলে কিন্তু সে হাশরের মাঠে আমাদের ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।



তাফসীর সূরা আম্বিয়া (১-৫)

নামকরণ:
কোন বিশেষ আয়াত থেকে এ সূরার নামকরণ করা হয়নি। এই সূরায় যেহেতু অনেক নবীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে তাই এর নাম রাখা হয়েছে “আল আম্বিয়া”।

শানে নুযুল:

   আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ বনী-ইসরাঈল, কাহফ, মারইয়াম, ত্বা-হা ও আম্বিয়া- এগুলো আমার প্রাচীন সম্পদ ও উপার্জন ৷ [বুখারীঃ ৪৪৩১] এর থেকে বুঝা যায় যে, এ সুরাগুলো প্রাথমিক যুগে নাযিল হয়েছিল। এগুলোর প্রতি সাহাবায়ে কিরামের আলাদা দরদ ছিল। তাই আমাদেরও উচিত। এগুলোকে বেশি ভালবাসা এবং এগুলো থেকে হেদায়াত সংগ্ৰহ করা।

সুরা আম্বিয়ায় ১৮ জন নবীর নাম এসেছে। তাঁদের জীবনের কোনো কোনো ঘটনা ও কখনওবা তাঁদের জীবনের কোনো বিশেষ ঘটনার কেবল ইঙ্গিত এ সুরায় এসেছে। আর এই মহান নবীরা হলেন: হযরত মুসা, হারুন, ইব্রাহিম, লুত, ইসহাক, ইয়াকুব, নুহ, দাউদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইসমাইল, ইদ্রিস, জুলকিফল, জুন্নুন বা ইউনুস, জাকারিয়া এবং ইয়াহইয়া (আলাইহিমুসসালাম)। এ ছাড়াও এসেছে মহান নবী ঈসা (আ) এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা)’র পবিত্র নাম। 

মহান ও সৎ ব্যক্তিরা জীবনে অনেক কঠিন সংকট ও সমস্যার শিকার হন। এসবই অনেক সময় মহান আল্লাহর পরীক্ষা মাত্র। নবীর-রাসুলরাও এর ব্যতিক্রম নন। তাঁদের ওপর নেমে আসা পরীক্ষা বা বিপদ ছিল সবচেয়ে কঠিন। সেইসব কঠিন অচলাবস্থার মধ্যে তাঁরা মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার শরণাপন্ন হতেন। মহান আল্লাহও তাঁদের প্রার্থনা শুনতেন এবং অচলাবস্থা বা সংকট থেকে মুক্তি দিতেন। যেমন, ইব্রাহিম নবীকে নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ও ইউনুস নবীকে মাছের পেট থেকে মুক্ত করার ঘটনা এবং জাকারিয়া নবীকে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে তথা জীবন-সায়াহ্নে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ইয়াহিয়া নামক সন্তান দান করা। আর ওই সন্তান ছিলেন মহান এক নবী। (এখানে) তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জানাচ্ছি সালাম।

সুরা আম্বিয়া শুরু হয়েছে এক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে। এতে বলা হয়েছে:

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় আসন্ন; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে এতই মত্ত যে, যখন তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শোনে।

অর্থাৎ যখনই কোনো আয়াত নাজিল হত ও বিশ্বনবী (সা) সেই আয়াত পড়ে শোনাতেন তখন মক্কার কাফির-মুশরিকরা শুনেও না শোনার ভান করত এবং বিষয়টিকে ক্রীড়া-কৌতুক হিসেবে গ্রহণ করত। অথচ তাদের উচিত ছিল এইসব জাগরণী-বার্তাকে গুরুত্ব দেয়া এবং এ নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা। কারণ, তাদের ভাগ্যের ওপর কুরআনের এইসব বাণীর গভীর প্রভাব রয়েছে। আসলে যারা দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের চিন্তায় সব সময় ব্যস্ত থাকে তারাই আল্লাহকে এবং পরকাল বা বিচার-দিবসের কথা ভুলে যায় বলে কুরআনের এই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তি নবী-রাসূলদের দাওয়াত গ্রহণ করবে না-এটাই স্বাভাবিক। একই কারণে মক্কার কাফির-মুশরিকরা বিশ্বনবী (সা) সম্পর্কে নানা অযৌক্তিক ও অশালীন কথা বলত এবং নানা অপবাদ দিত। তারা বিশ্বনবী (সা)-কে জাদুকর বলে অপবাদ দিত এবং বলত যে তিনি জাদুময় বাণীর মাধ্যমে মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করছেন! আবার বিশ্বনবীর সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার জন্য ও কুরআন থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য তারা কখনও কখনও এটাও বলত যে, মুহাম্মাদ একজন সাধারণ মানুষ মাত্র। তার বক্তব্যের প্রভাব আসলে জাদুরই প্রভাব।

মক্কার কাফির ও মুশরিকরা এও বলত যে, মুহাম্মাদ ওহি বলে যা প্রচার করছেন তা আসলে তার অসংলগ্ন ও খারাপ কিছু স্বপ্ন মাত্র যাকে সে সত্য বলে মনে করছে! (নাউজুবিল্লাহ) আবার তারা এটাও বলত যে, মুহাম্মাদ একজন মিথ্যাবাদী, সে নিজের কথাকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করছে! (নাউজুবিল্লাহ) কখনও কখনও কাফিররা বলত: মুহাম্মাদ একজন কবি। তাঁর বক্তব্যগুলো তারই কাব্যময় কল্পনা মাত্র!  তারা এও বলত, মুহাম্মাদ যদি সত্যিই আল্লাহর নবি হতেন তাহলে পূর্ববর্তী নবীরা যেমন মু’জিজা দেখিয়েছেন তেমনি তিনিও মু’জিজা বা অলৌকিক নানা নিদর্শন দেখাতেন। আল্লাহর নবি হয়ে থাকলে তাঁকে মু’জিজা দেখাতে হবে। এভাবে কাফির-মুশরিকরা বিশ্বনবী (সা) সম্পর্কে পরস্পর-বিরোধী ও স্ববিরোধী নানা কথা বলত। আর এ থেকেই বোঝা যায় তারা সত্যকে জানার চেষ্টা করত না। আসলে তারা যে কোনো উপায়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ময়দান থেকে নির্মূল করতে চেয়েছিল।

اِقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمۡ وَ هُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ مُّعۡرِضُوۡنَ ۚ﴿۱﴾

মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন(১), অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।(২)

(১) অর্থাৎ মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এখানে পৃথিবীর বিগত বয়সের অনুপাতে ঘনিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। লোকদের নিজেদের কাজের হিসেব দেবার জন্য তাদের রবের সামনে হাজির হবার সময় আর দূরে নেই। মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন একথারই আলামত যে, মানব জাতির ইতিহাস বর্তমানে তার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এখন সে তার সূচনাকালের পরিবর্তে পরিণামের বেশী নিকটবর্তী হয়ে গেছে। সূচনা ও মধ্যবর্তীকালীন পর্যায় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং এবার শেষ পর্যায়ে শুরু হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর একটি হাদীসে একথাই বলেছেন। তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেনঃ “আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে। যখন আমি ও কেয়ামত এ দুটি আঙ্গুলের মতো অবস্থান করছি।” [বুখারীঃ ৪৯৯৫] অর্থাৎ আমার পরে শুধু কেয়ামতই আছে, মাঝখানে অন্য কোন নবীর আগমনের অবকাশ নেই। যদি সংশোধিত হয়ে যেতে চাও তাহলে আমার দাওয়াত গ্ৰহণ করে সংশোধিত হও।

(২) অর্থাৎ কোন সতর্কসংকেত ও সতর্কবাণীর প্রতি দৃষ্টি দেয় না। দুনিয়া নিয়ে তারা এতই মগ্ন যে, আখেরাতের কথা ভুলে গেছে। আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে যে আল্লাহর উপর ঈমান, তাঁর ফরায়েযগুলো আদায় করতে হয়, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকতে হয় সেটার জন্য তারা প্ৰস্তুতি নিচ্ছে না। [ফাতহুল কাদীর] আর যে নবী তাদেরকে সর্তক করার চেষ্টা করছেন তার কথাও শোনে না। তাদের রাসূলের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ওহী এসেছে তারা সেটার প্রতি দৃষ্টি দেয় না। এ নির্দেশটি প্রাথমিকভাবে কুরাইশ ও তাদের মত যারা কাফের তাদেরকে করা হচ্ছে। [ইবন কাসীর]

মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, [1] অথচ ওরা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। [2]

[1] হিসাবের সময় বলতে কিয়ামত; যা প্রতি সেকেন্ড নিকটবর্তী হয়ে চলেছে। আর প্রতিটি আগমনকারী জিনিসই নিকটবর্তী এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যু স্বস্থানে তার নিজের জন্য কিয়ামত। তাছাড়া বিগত যুগসমূহের তুলনায় কিয়ামত নিকটে; কারণ (বিশ্বসৃষ্টির পর হতে) যে সকল যুগ পার হয়ে গেছে তা অপেক্ষা অবশিষ্ট যুগ অতি অল্প।

মহাপ্রলয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"যখন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, যখন তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে, যখন সমুদ্র উথলে উঠবে, যখন কবরগুলো উন্মোচিত করা হবে, তখন প্রত্যেকে জানবে সে আগে কি পাঠিয়েছিল আর পিছনে কি রেখে এসেছে" (সূরা- ইনফিতার, আয়াত- ১-৫) ।
মানুষকে সতর্ক করার জন্যই মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে নিয়োগ করেছেন নবী ও রাসূলবৃন্দ। এ সূরার প্রথমেই মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সামনে পরকাল বা বিচার-দিবস আসন্ন ও অনিবার্য। মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসে সব কাজের হিসেবে নেয়া হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ পার্থিব জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তারা পুনরুত্থানের ব্যাপারে উদাসীন। কেউ তাদেরকে পরকাল ও বিচার দিবস সম্পর্কে সতর্ক করতে চাইলেও তারা তা উপেক্ষা করে বা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা এ সম্পর্কে কথা শুনতেও প্রস্তুত নয়। এমনকি তারা অনেক সময় অর্থনৈতিক হিসেব-নিকেশ তুলে ধরে বলেন, জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান মানুষ বাকির আশায় নগদ ছাড়তে প্রস্তুত নয়!

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার :
১-মানুষের কৃতকর্মের হিসেব পরকালে নেয়া হবে। কিন্তু তা এত দূরে নয় যে এ ব্যাপারে উদাসীন হওয়া যায় ও যা খুশি তা করা যায়।
২-মানুষ যতই বেপরোয়া হোক না কেন পুনরুত্থান ও বিচার দিবসকে তারা এড়াতে পারবে না। তাদের বিচারের দিন অত্যাসন্ন ও অনিবার্য

আমরা সত্যিকারে যে আল্লাহর ভয় সেটা আমাদের জীবনে এপ্লাই করতে পারছি না। কিংবা আমরা সেটা ফলো করতে পারছি না । প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সেটা হক মোবাইলের দ্বারা কিংবা 📱 ছাড়া কোন গুনাহের কাজ করা সেটা আমরা প্রকাশ না করলেও সেটা গোপনীয়ভাবে করে থাকি তাহলে সেটা দেখা গেল কি যে একটা গুনা আমরা সেটা আমাদের বাপের সামনে করি না কিন্তু আল্লাহ যে আমার দেখছে আল্লাহ যে সবই জানেন সবই শুনেন সেটা কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি না তাই না যেখানে বরঞ্চ আল্লাহকে বেশি ভয় করা দরকার সেখানে আমরা আল্লাহকে ভয় করছি না আমরা বাপ মায়ের কিংবা আমার আত্মীয়-স্বজনদেরকে বন্ধু-বান্ধবের ভয়ে লুকিয়ে করছি রাতের অন্ধকারে কিংবা দ্বীনের কোন অংশে।
বরঞ্চ আল্লাহকে এমন ভাবে ভয় করা প্রয়োজন যে তিনি সব সময় আমাদের লক্ষ্য করছেন এবং কিরামান কতেবিন লিখছে।

ঠিক তেমন কোনো নারীকে সাথে সম্পর্ক রাখা

زين للناس حب الشهوات......

কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। পরকাল অস্বীকার করলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়।

















কিয়ামত বেশি দূরে নয়
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
কিয়ামত বেশি দূরে নয়
Shareঅ+অ-

কিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। পরকাল অস্বীকার করলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়। সাধারণত পরকাল বলতে বিচার দিবস ও তার পরবর্তী সময়কে বোঝানো হয়। তবে মৃত্যুর পর থেকেই যেহেতু পরকালীন সুখ ও শাস্তি, জান্নাত ও জাহান্নামের ছোঁয়া মানুষ পেতে শুরু করে, তাই গবেষক আলেমরা মৃত্যু-পরবর্তী সময় থেকেই পরকালের সূচনা বলে মত দিয়েছেন। সুতরাং মৃত্যুর পর ফেরেশতাদের সমাদার ও অনাদর, কবরের প্রশ্ন-উত্তর, সুখ ও শাস্তি, পুনরুত্থান, হিসাব, মিজান, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম সব কিছু পরকালের অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রধান হলো ইমান বা বিশ্বাস। ইমানের প্রথম তিনটি বিষয় হলো তাওহিদ তথা স্রষ্টার একত্ববাদে বিশ্বাস, রিসালাত অর্থাৎ নবী-রাসুল বা প্রেরিত পুরুষদের প্রতি বিশ্বাস এবং আখিরাত মানে পরকালে বিশ্বাস। আখিরাত শব্দের অর্থ হলো পরে, আখিরাতের বিশ্বাস মানে হলো মৃত্যুর পরের জীবন, কবর বা বারজাখের প্রশ্নোত্তর এবং তথায় শান্তি ও শাস্তি, কিয়ামত বা মহাপ্রলয়, হাশর–নশর তথা পুনরুত্থান ও বিচারের জন্য সমবেত হওয়া, পাপ-পুণ্যের বিচার এবং বেহেশত-দোজখ অর্থাৎ পুরস্কার ও শাস্তি এবং সেখানে অনন্ত জীবনের প্রতি বিশ্বাস করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তারা আখিরাত বা পরকালের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৪)

কিয়ামতের তিনটি অবস্থা রয়েছে, এর প্রথম পর্যায় হলো ব্যক্তির মৃত্যু। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘যখন কারও মৃত্যু হয়, তখন তার কিয়ামত সংঘটিত হয়।’ আলমে বারজাখ বা বারজাখ জগতে রুহ ও নাফস ইল্লিন বা ছিজ্জিনে অবস্থান করবে এবং দেহ হয়তো বিলীন হয়ে যাবে, নয়তো সুরক্ষিত থাকবে। এখানে প্রশ্ন হবে—তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে? উত্তর হবে, ‘আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম, আমার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।’

দ্বিতীয় পর্যায় হলো মহাপ্রলয়, যার মাধ্যমে সব সৃষ্টি ধ্বংস অর্থাৎ লয় বা বিলীন হয়ে যাবে। এটি সংঘটিত হবে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙায় প্রথম ফুত্কারের মাধ্যমে। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘এ জগতে যা কিছু আছে সবই লয়প্রাপ্ত হবে, শুধু আপনার রবের অস্তিত্বই টিকে থাকবে।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ২৬-২৭)। ব্যক্তিসত্তার মৃত্যু বা প্রথম কিয়ামতের পর থেকে এবং দ্বিতীয় কিয়ামত বা শিঙায় প্রথম ফুত্কারের পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত আলমে বারজাখ বা অন্তর্বর্তীকালীন জীবন।

তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ শিঙায় দ্বিতীয় ফুত্কারের পর চূড়ান্ত কিয়ামত অর্থাৎ হাশর ও নশর তথা পুনরুত্থান ও মহামিলন বা মহাসম্মিলন অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই শেষ বিচারের দিন এবং আখিরাত বা পরকালের অনন্ত জীবনের সূচনা এদিন থেকেই হবে, যে জীবনের আর কোনো শেষ বা সমাপ্তি নেই, নেই কোনো সীমা বা পরিসীমা।




হাশরের দিনে প্রত্যেক মানুষকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, কিয়ামতের দিন কোনো আদম সন্তান পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক পা–ও নড়তে পারবে না। এই বিষয়গুলো হলো জীবন, যৌবন, আয়, ব্যয় ও জ্ঞান। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল? যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছে? কীভাবে আয়-উপার্জন করেছে? কোন পথে ব্যয় করেছে? জ্ঞান বা বিবেক অনুসারে কর্ম করেছে কি না?

এই সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের জন্য জীবনব্যাপী প্রস্তুতি প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমাদের পেশা ও কর্ম যা-ই হোক, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহ ও রাসুলের রাজি, খুশি বা সন্তুষ্টি অর্জন করা।

হাশরের দিন তিনটি পর্বে বিচার অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে শুধু একটি প্রশ্ন থাকবে ইমান। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছিল কি না। দ্বিতীয় ধাপে বিচার করা হবে ‘হক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক বিষয়ে। বান্দার হক বা অধিকার নষ্ট করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন না। শেষ পর্যায়ে বিচার হবে আল্লাহর হক তথা বিশেষ ইবাদতের, যাতে প্রথম প্রশ্ন হবে সালাত বা নামাজের।

কিয়ামত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন ‘যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, এর অনুষ্ঠান অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। এটা কাউকে করবে হীন, কাউকে করবে সম্মানিত। যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে! এবং পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়বে, ফলে তা উত্থিত ধূলিকণায় পর্যবসিত হবে এবং তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়বে—ডান দিকের দল, কী ভাগ্যবান ডান দিকের দল! কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী।’ (সুরা-৫৬, ওয়াকিআহ, আয়াত: ১-১২)

‘মহাপ্রলয়! মহাপ্রলয় কী? মহাপ্রলয় সম্বন্ধে তুমি কী জানো? সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হবে এবং পর্বতসমূহ ধুনিত রঙিন পশমের মতো হবে। তখন যার নেকির পাল্লা ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবন লাভ করবে। যার নেকির পাল্লা হালকা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়া দোজখ।’ (সুরা-১০১, ওয়াকিআহ, আয়াত: ১-১১)

কিয়ামত বেশি দূরে নয়
কিয়ামতের সঠিক সময় আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী কিয়ামত খুব বেশি দূরে নয়। কেননা কোরআনে কিয়ামতের সময়কাল বোঝাতে ‘নৈকট্যবাচক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিয়ামত সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহ ওহি নাজিল করেন। ইরশাদ হয়, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আপনার কাছে তার কোনো জ্ঞান নেই এবং নেই কোনো সৃষ্টির কাছেও। বরং এর উদ্দেশ্য ও প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। তিনিই তা সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৩১৮)

কোরআন-হাদিসে কিয়ামতের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বর্ণনা করা না হলেও কিয়ামতের কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে। যার মধ্যে কিছু নিদর্শন রয়েছে ‘আলামতে কুবরা’ বা বড় নিদর্শন এবং কিছু নিদর্শনকে ‘আলামতে সুগরা’ বা ছোট নিদর্শন বলা হয়েছে। বড় নিদর্শনগুলো কিয়ামতের অতি নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। আর রাসুল (সা.)-এর পর মানুষ যত বেশি সময় পার করবে তত বেশি ছোট নিদর্শন প্রকাশ পাবে। ছোট আলামতের মধ্যে রয়েছে, সম্পদের প্রাচুর্য বাড়া, সততা না থাকা, আসমানি জ্ঞানের চর্চা কমে যাওয়া, ব্যভিচার, সুদ, বাদ্য ও অশ্লীল গান, মদ ও মাদকদ্রব্য বৃদ্ধি পাওয়া, মানুষ হত্যা, উলঙ্গপনা, মিথ্যা সাক্ষ্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাওয়া। বড় নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ, ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর অবতরণ, ইয়াজুজ ও মাজুজের আগমন, পূর্ব, পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিধস হওয়া, ধোঁয়া ও পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়া ইত্যাদি। (শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রা.), মাজমাউল ফাতাওয়া : ২/১৩৭)














কিয়ামতের আগের সমাজ যেমন হবে

যখন চরিত্র দুর্বল হবে, মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাবে। সন্তানরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে। তারা তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবে যেমন মুনিব তার গোলামের সঙ্গে করে। সামাজিক রীতি ও মূল্যবোধ পাল্টে যাবে। তাতে ভালো-মন্দের মিশ্রণ ঘটবে। নিচু শ্রেণির মানুষ জাতির শাসক ও নেতা হবে। অযোগ্য ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে। মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ-সম্পদ থাকবে। বিলাসিতা ও অপচয় বেড়ে যাবে। মানুষ গর্ব করবে অট্টালিকার উচ্চতা আর ভোগের সামগ্রী ও আসবাবপত্র নিয়ে। যদিও তারা ফকির ছিল ও দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটাত এবং তারা অন্যের দয়ায় জীবন যাপন করত। যেমনটি রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দাসি তার মনিবকে প্রসব করবে, তুমি দেখতে পাবে যাদের পায়ে জুতা এবং পরনে কাপড় নেই, নিঃস্ব ও বকরির রাখাল তারা উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরিতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য হলো যুগের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করা, বেদুঈনরা শাসকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে, অত্যাচারীরা রাষ্ট্রের মালিক হবে। অতঃপর তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাবে, তারা অট্টালিকা নির্মাণে মনোযোগী হবে এবং তা নিয়ে অহংকার করবে। আর আমরা যেন এ যুগেই তা স্বচক্ষে দেখছি।’ (জাওয়াহিরুল হারিরিহ : ২/৩৫)

যেভাবে সংঘটিত হবে কিয়ামত

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে। আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, গ্রহ-নক্ষত্র কোনো কিছুই আপন অবস্থায় অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন ঘটবে?  আপনি বলুন! প্রকৃতপক্ষে তার জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের কাছেই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে তা প্রকাশ করবেন; তা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের ওপর আপতিত হবে। ...’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৭)
[2] অর্থাৎ, ওর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হতে অমনোযোগী, পৃথিবীর চাকচিক্যে নিমজ্জিত (যা সেদিনকার জন্য ক্ষতিকর) এবং ঈমানের চাহিদা হতে উদাসীন (যা সেদিনকার জন্য কল্যাণকর)।














আমাদের সমাজে কত রকম মানুষ, কত রকম মুসলমান। কেউ নামায পড়ে, কেউ পড়েনা, কেউ ভাল কাজ করে, কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে।

এতসব কাজের মধ্যে যে কাজটি আজকাল অহরহ চোখে পড়ে, তা হচ্ছে হাসির ছলে না বুঝে ইসলাম বা মুসলমানদের কোনো বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা।

বন্ধুদের আড্ডায় আপনিও হয়তো শুনেছেন, ওই দেখ, হুজুরের কি সুন্দর ছাগলা দাড়ি!! সবার সাথে আপনিও হয়তো হেসে ফেললেন হো হো করে।

কথা কথায় কারো অক্ষমতা বোঝাতে ‘মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত’ কথাটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। কখনো ভেবে দেখেছেন, এ কথায় কাকে ঠাট্টা করা হল- আল্লাহর ঘর মসজিদ নাকি মোল্লা মৌলভীকে?

আমাদের নাটক সিনোমাতেও কখনো কখনো না বুঝে ইমাম বা হুজুর চরিত্র রূপায়ন করা হয় কোনো একটি নেতিবাচক বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে, এতে দর্শকদের মনে জন্ম নিতে পারে বিরূপ ধারণা।

প্রিয় পাঠক, আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তিনি যেগুলোর কারণে বান্দার সব আমল বাতিল করে দিতে পারেন, এসবের অন্যতম হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম সর্ম্পকিত কোনো বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা।

শুধু কি আমল বাতিল হয়ে যাওয়া, বরং কোনো কোনো কথা ও ঠাট্টা তো আপনাকে ইসলাম থেকে বের করে দেবে আপনার অজান্তেই।

এজন্যই আলেমরা বলেন, নামাজ না পড়া কুফুরী নয়, কিন্তু নামাজ বা নামাজীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কিংবা তামাশা করা কুফুরী। মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা করতো, তাদের বোকা ভাবতো। আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না। ’ (সূরা বাকারা-১৩)

ইমাম ইবনে কুদামাহ লিখেছেন, যে আল্লাহকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি দিল, কিংবা যে আল্লাহ বা তার রাসুল কিংবা দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করল, সে কাফের হয়ে গেল। (আল মুগনী)

ইমাম নববী বলেন, স্বেচ্ছায় কিংবা কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোনো কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসুলের কোনো বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরী।

ইমাম কুরতুবী লিখেছেন, মজা করার জন্য হোক বা সত্যি সত্যি হোক, ইসলামের কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করাও কুফুরী। এতে কারো দ্বিমত নেই।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, দ্বীনের যে কোনো স্পষ্ট বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরী। যে এমন করল তার ঈমান ধ্বংস হয়ে কুফুরীতে পরিণত হল।

আর তাই কোনো একজন সাধারণ মানুষ, যে দাড়ি রেখে দ্বীনের ওপর চলতে সচেষ্ট, যে নারী পর্দা রেখে চলতে চায়, তাকে যদি এ কারণে কেউ তুচ্ছ ভাবে কিংবা তামাশার দৃষ্টিতে দেখে, তবে নিশ্চয়ই বিষয়টি গিয়ে দ্বীনের সীমারেখা পর্যন্ত পৌঁছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়।

অনেক নামাযী মানুষ কিংবা দাড়িওয়ালা হয়তো অপকর্মে লিপ্ত, তার কর্মের জন্য সে নিজেই দায়ী। ধর্মের লেবাসধারীর অপকর্মের দায়ভার কোনো মতেই ধর্মের নয়। তাই তার ধর্মকে গালমন্দ করা বৈধ নয়, কারণ এটি তার স্বভাবের দোষ, তার নামায কিংবা আমলের এতে কোনো হাত নেই।

অহরহ পথে ঘাটে এসব বিষয় নিয়ে ‘মশকরা’ করায় মানুষ নিজের অজান্তেই তার দ্বীন থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যেতে পারে, সামান্য ‘বিদ্রুপে’ শেষ হয়ে যেতে পারে এতদিনের সব নেক আমল।

আল্লাহ পাক এমন লোকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে, আমরা একটু হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসুলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ? তোমরা কারণ দেখিয়ো না, তোমরা তো তোমাদের ঈমানের পরও কুফুরী করে ফেলেছো। ’ (সূরা তওবা-৬৫-৬৬)

পবিত্র কুরআনে অভিশপ্ত জাতিদের যেসব ঘটনা বিবৃত রয়েছে, তারা তাদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো, নবীর অনুসারীদের নিয়ে পথে ঘাটে বিদ্রুপ করতো, আল্লাহ পাক তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন, পরকালেও তাদের এর বদলা দিবেন আল্লাহ।

মদীনার মুনাফিকদের অবস্থাও ছিল একই রকম। যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবের বিবরণে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।
মদীনার মুনাফিকদের অবস্থাও ছিল একই রকম। যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবের বিবরণে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।

খুব সংক্ষেপে কিছুটা হলেও আপনি হয়তো এর ভয়াবহতা অনুমান করতে পেরেছেন। আর তাই আজ থেকে সব বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা নয়, ইসলাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয়, সামান্য একটু হাসির জন্য নিজের সব ঈমান আমল বিকিয়ে দেওয়া কোনো সচেতন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

নশ্বর দুনিয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্র

ফুলে ফলে ভরা এই পৃথিবী আমাদের কত সুন্দর, মনোহর ও চিত্তাকর্ষক মনে হয়। আসলে কী তাই? না, এমনটি নয়। নশ্বর দুনিয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্র। এখানকার পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হতে পারবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে, পরকালীন অনন্ত জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক এই বিশেষত্বটি অত্যন্ত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘আমি পৃথিবীর সবকিছু মানুষের জন্য চাকচিক্যময় করে দিয়েছি, যাতে নারী-পুরুষদের পরীক্ষা করতে পারি যে, তাদের মধ্যে কে ভালো কাজে উত্তম।’ (সূরা কাহফ : আয়াত-৭)

(খ) ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম! তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সূরা মূলক : আয়াত-২) (গ) ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিনকে, যে দিন পিতা পুত্রের কোনো কাজে আসবে না এবং পুত্র ও পিতার কোনো উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি সত্য। তাই দুনিয়ার এই জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় ফেলে না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে ধোঁকাবাজ শয়তান ও যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে’। (সূরা লুকমান : আয়াত-৩৩)

(ঘ)‘হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি সত্য। কাজেই পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় ফেলে না দেয় এবং সেই প্রতারক শয়তান যেন কিছুতেই তোমাদের আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে।’ (সূরা ফাতির : আয়াত-৫)।

(ঙ) ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে, সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৪)। উল্লিখিত পাঁচটি আয়াতে দুনিয়া নামক পরীক্ষা কেন্দ্রের স্বরূপ, এখনকার কর্তব্য কর্ম, জীবন-মরণের নাগর দোলা, পরকালীন হিসাব-নিকাশের ভয়াবহতা, ও কোনোক্রমেই শয়তান ও পার্থিব জীবনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়ার প্রতি সতর্ক করা হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, এই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার বস্তগুলো সম্পর্কে ও আল্লাহপাক মানুষকে অবহিত করেছেন। পার্থিব জগতে মহান আল্লাহপাক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেন মানুষকে পরীক্ষার জন্য। এতদ সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের বস্তু। অবশ্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে বড় ধরনের প্রতিদান’। (সূরা আনফাল : আয়াত-২৮)।

(খ) ‘বস্তুত : তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা স্বরূপ। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৫)। বর্তমান সমাজের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দুনিয়ার জীবনের খেল-তামাশা ও প্রাচুর্যের লোভে পড়ে পরকালীন মহা পুরস্কারের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। অথচ তারা জানেনা বা চিন্তা করে দেখে না যে, পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। এই দিক নির্দেশনা আল্লাহপাক আল কোরআনে খোলাখুলি প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক গর্ব অহঙ্কার এবং ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন এক পশলা বৃষ্টির অবস্থা, যার কলে উৎপাদিত সবুজ ফসল কাফেরদের চমৎকৃত করে। এর পর তা’ শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর তা’ খরকুটা হয়ে যায়। তেমনি দুনিয়ার চাকচিক্যের পরিবর্তে আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তোষ, পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়’। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২০)। (খ) ‘পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা; যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর,আল্লাহপাক তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান প্রদান করবেন। আর তিনি তোমাদের কাছে ধন সম্পদ কামনা করেন না’। (সূরা মোহাম্মাদ : আয়াত-৩৬)।

(গ) ‘এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের গৃহেই রয়েছে প্রকৃত জীবন। যদি তারা একথা জানত? (সূরা আনকাবুত : আয়াত-৬৪)।

মোট কথা, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। একদিন এ জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর বিধানকে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়া পরকালীন জীবনে সফলতার আশা করা বৃথা।









مَا یَاۡتِیۡهِمۡ مِّنۡ ذِکۡرٍ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ مُّحۡدَثٍ اِلَّا اسۡتَمَعُوۡهُ وَ هُمۡ یَلۡعَبُوۡنَ ۙ﴿۲﴾

যখনই তাদের কাছে তাদের রব-এর কোন নতুন উপদেশ আসে(১) তখন তারা তা শোনে কৌতুকচ্ছলে(২),

(১) অর্থাৎ কুরআনের যে নতুন সূরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হয় এবং তাদেরকে শুনানো হয়। [ইবন কাসীর] তারা এটাকে কোন গুরুত্বের সাথে শুনে না। ইবন আব্বাস বলেন, তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আহলে কিতাবদেরকে তাদের কাছে যা আছে তা জিজ্ঞেস কর, অথচ তারা তাদের কিতাবকে বিকৃতকরণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বাড়ানো-কমানো সবই করেছে। আর তোমাদের কাছে রয়েছে এমন এক কিতাব যা আল্লাহ সবেমাত্র নাযিল করেছেন, যা তোমরা পাঠ করে থাক, যাতে কোন কিছুর সংমিশ্রণ ঘটেনি। [বুখারী: ২৬৮৫]

(২) যারা আখেরাত ও কবরের আযাব থেকে গাফেল এবং তজন্যে প্রস্তুতি গ্ৰহণ করে না, এটা তাদের অবস্থার অতিরিক্ত বর্ণনা। যখন তাদের সামনে কুরআনের কোন নতুন আয়াত আসে এবং পঠিত হয়, তখন তারা একে কৌতুক ও হাস্য উপহাসচ্ছলে শ্রবণ করে। তাদের অন্তর আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে। এর এ অর্থও হতে পারে যে, তারা খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে, কুরআনের প্রতি মনোযোগ দেয় না এবং এরূপ অৰ্থও হতে পারে যে স্বয়ং কুরআনের আয়াতের সাথেই তারা রঙতামাশা করতে থাকে। আবার এ অর্থও হতে পারে যে, এখানে খেলা মানে হচ্ছে এই জীবনের খেলা। আল্লাহ ও আখেরাতের ব্যাপারে গাফেল লোকেরা এ খেলা খেলছে। [দেখুন, কুরতুবী]

কুরআন যা সময়ানুসারে প্রয়োজন মত নিত্য নতুনভাবে অবতীর্ণ হয়। যদিও তা তাদেরই উপদেশের জন্য অবতীর্ণ হয় তবুও তারা এমনভাবে শ্রবণ করে যেন তারা তা নিয়ে হাসিঠাট্টা, উপহাস ও খেলা করছে; অর্থাৎ তা নিয়ে তারা কোন চিন্তা-ভাবনা করে না।

ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা করা
ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মননীত ধর্ম। এটা কোন মানব সৃষ্ট ধর্ম যে যার যখন মন চাইবে তখন তাতে কাস্টমাইজ করবে। এবং ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। যে ধর্মকে বিকৃত করে নিজের সুবিধানুযায়ী ধর্ম মেনে চলে প্রকৃত পক্ষে সে মুসলিম নয়।

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে ধর্ম দিয়েছেন মানুষের হেদায়াতের জন্য ধর্মকে নিজের মত করে ব্যবহার করারজন্য নয়। যেমনটা করেছে পূর্বে আহলে কিতাবীরা।

তাই তারা কখনোই প্রকৃত আল্লাহর বান্দা হতে পারেনী। আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনকে আপনি পরিবর্তন না করলে এ দ্বীন (ইসলাম) আপনাকে ঠিকই পরিবর্তন করবে যদি না আপনার অন্তরে কোন মুনাফিকি না থাকে।

দুনিয়াতে কত রকম মানুষ। কেউ নামায পড়ে, কেউ পড়েনা, কেউ ভাল কাজ করে আর কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে জীবনকে শেষ করে দেয়।

ইসলাম সৎকর্মশীল হিসেবে রুপান্তরিত করতে শিখায় ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা করা নয়।
তাই ইসলাম এসেছে মানুষকে প্রকৃত সৎকর্মশীল হিসেবে রুপান্তরিত করতে। মহান আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:

زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُواْ

وَالَّذِينَ اتَّقَواْ فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

وَاللّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاء بِغَيْرِ حِسَابٍ

পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে।

পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে।

আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন। [ সুরা বাকারা ২:২১২

সিরাতুল মুস্তাকিম এর শেষ প্রান্তে পৌছে দিয়ে আপনাকে আমাকে সফলকাম করতে। ইসলাম নিজে পরিবর্তন হতে আসেনি বরং আমাদেরকে পরিবর্তন করতে এসেছে।


আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধান নিয়ে হাসি-ঠাট্টা শুধু এ যুগে নয়। বরং আদি যুগ থেকেই ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা ছিলো। সে সময়ের মুনাফিকদের কার্জ কালাপ

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের পাতায় পাতায় বর্ণনা করেছেন বিস্তারিত ভাবে।

যার বহির প্রকাশ ঘটছে বর্তমান জমানার মানুষের মাঝে। তারা হাসির ছলে না বুঝে ইসলাম বা মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।

বন্ধুদের আড্ডায় আপনিও হয়তো শুনেছেন, ওই দেখ, হুজুরের কি সুন্দর ছাগলা দাড়ি!! সবার সাথে আপনিও হয়তো হেসে ফেললেন হো হো করে।

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে:

حَدَّثَنَا بِذَلِكَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْخَلاَّلُ …عَنْ جَابِرِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ

عَلَيْكَ السَّلاَمُ

فَقَالَ:لاَ تَقُلْ عَلَيْكَ السَّلاَمُ وَلَكِنْ قُلِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ

জাবির ইবনু সুলাইম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললাম:

আলাইকাস সালাম’।

তিনি বললেনঃ ‘আলাইকাস সালাম বল না, বরং ‘আসসালামু ‘আলাইকা’ বল।

আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয়
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ফিতনায় লিপ্ত হচ্ছি। নিজের অজান্তেই কিংবা ইচ্ছা করে ইসলামের বিভিন্ন বিধিনিষেধ, সুন্নাহ নিয়ে বিদ্রুপ করি কিংবা ইসলাম ও ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা, কটুকথা বলি।

আপনি জানেন আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তিনি যেগুলোর কারণে বান্দার সব আমল বাতিল করে দিতে পারেন,

এসবের অন্যতম হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম সর্ম্পকিত কোনো বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা।

শুধু কি আমল বাতিল হয়ে যাওয়া, বরং কোনো কোনো কথা ও ঠাট্টা তো আপনাকে ইসলাম থেকে বের করে দেবে আপনার অজান্তেই।

মহান আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ

قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ

আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম।

আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? সুরা তাওবা ৯:৬৫

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন:
আল্লাহ, তার কুরআন এর আয়াতসমূহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) কে কটাক্ষ করা কুফুরী।

এর মাধ্যমে কেউ ঈমান আনার পর ও কাফির হয়ে যায়। মাজমু’ ফাতাওয়া : ২৭৩/৭

ইমাম নাববী রহ. বলেন:

যদি কেউ মদের পাত্র আদান-প্রদানের সময় কিংবা ব্যভিচারে লিপ্ত হবার প্রাক্কালে আল্লাহকে তাচ্ছিল্য করে বিসমিল্লাহ বলে,

তবে সে কাফের হয়ে যাবে। রাওদাতুত তালিবীন : ৬৭/১০

শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দিল ওয়াহাব রহ. বলেন:

যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত সামান্য কোনো বিষয়, আল্লাহ প্রদত্ত সাওয়াব প্রতিদান কিংবা ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা বা তার কোনো শাস্তির বিধানের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, সে ব্যক্তি কাফের হবে।

এর দলীল আল্লাহ তায়া’লার বাণী:

وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ

قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُون

আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম।

আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? সুরা তাওবা ৯:৬৫

لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِن نَّعْفُ عَن طَآئِفَةٍ مِّنكُمْ

نُعَذِّبْ طَآئِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُواْ مُجْرِمِينَ

ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও,

তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার। সুরা তাওবা ৯:৬৬

শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে দাড়িকে ঘৃণা করবে এবং বলবে এটি আবর্জনা, সে কি মুরতাদ হয়ে যাবে?

উত্তরে তিনি বলেন:

যদি সে জানে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক দাড়ি প্রমাণিত, তাহলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দ্বীনকে অস্বীকার করার শামিল হবে।

ফলে তাকে মুরতাদ আখ্যা দেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম : ১৯৫/১১

এজন্যই আলেমরা বলেন, নামাজ না পড়া কুফুরী নয়, কিন্তু নামাজ বা নামাজীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কিংবা তামাশা করা কুফুরী।

মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা ও ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা করা কিসের আলামত।
মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা করতো, তাদের বোকা ভাবতো।

আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশে বলেছেন:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে,

আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। সুরা বাকারা ২:১৩

وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ

قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ

আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে,

তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।  সুরা বাকারা ২:১৪

اللّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে। সুরা বাকারা ২:১৫

ইমাম ইবনে কুদামাহ লিখেছেন:
যে আল্লাহকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি দিল, কিংবা যে আল্লাহ বা তার রাসুল কিংবা দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করল, সে কাফের হয়ে গেল। আল মুগনী

ইমাম নববী বলেন:

স্বেচ্ছায় কিংবা কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোনো কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসুলের কোনো বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরী।

এই কাজটি অর্থাৎ আল্লাহ বা তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কুরআন অথবা দ্বীন ও ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা, হাসি করা কুফরী। যদিও তা মানুষকে হাসানোর নিয়তে হয়ে থাকে।

যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এ রকম বিদ্রুপের ঘটনা ঘটেছিল। একদা মুনাফেকরা তাঁকে এবং সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলল,

আমরা এ সমস্ত লোকদের চেয়ে অধিক পেট পূজারী, অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে এদের চেয়ে অধিক ভীতু আর কাউকে দেখিনি।

কাজেই আল্লাহ তাআ’লা, রিসালাত, অহী এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত পবিত্র। এগুলোর কোন একটি নিয়ে ঠাট্টা করা বৈধ নয়। যে এরূপ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে।

কারণ তার কাজটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, কিতাব এবং শরীয়তকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রমাণ বহন করে। যারা এ ধরণের কাজ করবে,

তাদের উচিৎ আল্লাহর দরবারে তাওবা করে এবং ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা। তাদের উচিৎ আল্লাহর প্রতি ভয় ও সম্মান দিয়ে অন্তরকে পরিপূর্ণ করা।

কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়। সুরা নিসা ৪:১১০

বিদ্রুপকারীর শাস্তি ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
আর যখন তোমরা নামাজের জন্য আহ্বান করো, তখন তারা একে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الَّذِينَ اتَّخَذُواْ دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا

مِّنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে

এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। সুরা মায়েদা ৫:৫৭

ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা মুনাফিক, কাফেরদের কাজ। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَذَا الَّذِي بَعَثَ اللَّهُ رَسُولًا

তারা যখন আপনাকে দেখে, তখন আপনাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্ররূপে গ্রহণ করে, বলে, এ-ই কি সে যাকে আল্লাহ রসূল’ করে প্রেরণ করেছেন? সুরা ফুরকান ২৫:৪১

إِن كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنْ آلِهَتِنَا لَوْلَا أَن صَبَرْنَا عَلَيْهَا وَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

حِينَ يَرَوْنَ الْعَذَابَ مَنْ أَضَلُّ سَبِيلًا

সে তো আমাদেরকে আমাদের উপাস্যগণের কাছ থেকে সরিয়েই দিত, যদি আমরা তাদেরকে আঁকড়ে ধরে না থাকতাম।

তারা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন জানতে পারবে কে অধিক পথভ্রষ্ট। সুরা ফুরকান ২৫:৪২

ইসলাম নিয়ে বিদ্রূপ করা কবিরা গুনাহ এবং আল্লাহর সীমারেখার লঙ্ঘন। এটি কুফরের গর্ত; যে গর্তে না জেনে না বুঝে অনেক জাহেল ও মূর্খ লোক পড়ে যায়।

ইমাম ইবনে হাজম আল যাহেরী বলেন
প্রত্যক্ষ দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত: যে ব্যক্তির নিকট দলিল পৌঁছার পরও সে ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহকে

কিংবা কোন ফেরেশতাকে কিংবা কোন নবীকে কিংবা কুরআনের কোন আয়াতকে কিংবা ইসলামের কোন একটি ফরজ বিধানকে বিদ্রূপ করে সে ব্যক্তি কাফের।

আল-ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল ৩/১৪২

শাইখ সুলাইমান আলে-শাইখ বলেন:

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে, কিংবা আল্লাহর কিতাবের সাথে কিংবা তাঁর রাসূলের সাথে, কিংবা তাঁর ধর্মের সাথে বিদ্রূপ করে:

সকল আলেমের ইজমার ভিত্তিতে সে কাফের। যদিও সে এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে বিদ্রূপ করা উদ্দেশ্য না করে থাকুক। তাইসীরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা-৬১৭

ইসলাম অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় : মুসলমান হওয়ার জন্য যে মৌলিক সাতটি বিষয়ের ওপর ইমান আনতে হয় তার অন্যতম হলো,

পূর্ববর্তী নবী ও আসমানি গ্রন্থগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। কাজেই ইসলামের শিক্ষা হলো, কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে হাসি-তামাশা করা যাবে না। অন্যের ধর্মকে দেখতে হবে শ্রদ্ধার চোখে।

দ্বীনের জন্যেই তো আল্লাহ্‌ আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন।
জান্নাত-জাহান্নাম প্রস্তুত করেছেন। দ্বীন ইসলাম বা বা এর কোন বিধান নিয়ে অথবা দ্বীনদ্বারদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ সাথে সাথে ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা করলে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌ বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُواْ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا يَضْحَكُونَ

যারা অপরাধী, তারা বিশ্বাসীদেরকে উপহাস করত। সুরা মুতাফফিফীন ৮৩:২৯

وَإِذَا مَرُّواْ بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ

এবং তারা যখন তাদের কাছ দিয়ে গমন করত তখন পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করত। সুরা মুতাফফিফীন ৮৩:৩০

وَإِذَا انقَلَبُواْ إِلَى أَهْلِهِمُ انقَلَبُواْ فَكِهِينَ

তারা যখন তাদের পরিবার-পরিজ নের কাছে ফিরত, তখনও হাসাহাসি করে ফিরত। সুরা মুতাফফিফীন ৮৩:৩১

وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هَؤُلَاء لَضَالُّونَ

আর যখন তারা বিশ্বাসীদেরকে দেখত, তখন বলত, নিশ্চয় এরা বিভ্রান্ত। সুরা মুতাফফিফীন ৮৩:৩২

আমরা যারা আল্লাহর প্রদত্ত দ্বীন পালনে সর্বদা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি সমাজের সাথে, পরিবারের সাথে, নিজের নফসের সাথে আল্লাহ আমাদের মনোবল আরো বাড়িয়ে দিন।

নিকৃষ্ট মানুষের ঠাট্টা-বিদ্রুপে না আমাদের মনোবল কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না আমার ধর্মের বিধানের গুরুত্ব কমবে। কাক্ষিত কালেও এ সম্ভব হবে না।

ইসলাম নিজে সকল মানবজাতিকে আলো ছড়িয়েই যাবে, চাই যে এ আলো দিয়ে আলোকিত হবে নতুবা যারা নিজেদের বিশ্রি অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে রাখবে।

আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।
দুনিয়াতে যারা নিজেদের ভালবাসাকে কুফরির মাঝে স্থান দিয়েছে – আল্লাহ যদি তাদের ক্ষমা না করেন তাদের পরিনত স্থান জাহান্নাম।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:

وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ

তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। সুরা মুলক ৬৭:১০

হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর যদি অজান্তে শিক হয়ে থাকে তবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

لَاهِیَۃً قُلُوۡبُهُمۡ ؕ وَ اَسَرُّوا النَّجۡوَی ٭ۖ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ٭ۖ هَلۡ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ ۚ اَفَتَاۡتُوۡنَ السِّحۡرَ وَ اَنۡتُمۡ تُبۡصِرُوۡنَ ﴿۳﴾

তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী। আর যারা যালেম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এ তো তোমাদের মত একজন মানুষই, তবুও কি তোমরা দেখে-শুনে জাদুর কবলে পড়বে?(১)

(১) অর্থাৎ তারা বলতো, এ ব্যক্তি তো কোনক্রমে নবী হতেই পারে না। কারণ এতো আমাদেরই মতো মানুষ, খায় দায়, বাজারে ঘুরে বেড়ায়, স্ত্রী-সন্তানও আছে। কাজেই এ লোক কি করে নবী হয়? তবে কিনা এ ব্যক্তির কথাবার্তায় এবং এর ব্যক্তিত্ত্বের মধ্যে জাদু আছে। ফলে যে ব্যক্তি এর কথা কান লাগিয়ে শোনে এবং এর কাছে যায় সে এর ভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই যদি নিজের ভালো চাও তাহলে এর কথায় কান দিয়ো না এবং এর সাথে মেলামেশা করো না। কারণ এর কথা শোনা এবং এর নিকটে যাওয়া সুস্পষ্ট জাদুর ফাঁদে নিজেকে আটকে দেয়ার মতই। [দেখুন, ইবন কাসীর]

নবীর মানুষ হওয়ার ব্যাপারটা তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া তারা এ কথাও বলে যে, তোমরা কি দেখ না, সে একজন জাদুকর? দেখে-শুনেও তোমরা তাঁর জাদুর ফাঁদে কেন পা দিচ্ছ?

قٰلَ رَبِّیۡ یَعۡلَمُ الۡقَوۡلَ فِی السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ ۫ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۴﴾

তিনি বললেন, আসমানসমূহ ও যমীনের সমস্ত কথাই আমার রব-এর জানা আছে এবং তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(১)

(১) অর্থাৎ নবী তাদের মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব রটনার এই অভিযানের জবাবে এটাই বলেন যে, তোমরা যেসব কথা তৈরী করো, সেগুলো জোরে জোরে বলো বা চুপিসারে কানে কানে বলো, আল্লাহ সবই শোনেন ও জানেন। [ফাতহুল কাদীর] তিনি আসমান ও যমীনের সমস্ত কথা জানেন। কোন কথাই তার কাছে গোপন নেই। আর তিনিই এ কুরআন নাযিল করেছেন। যা আগের ও পরের সবার কল্যাণ সমৃদ্ধ। কেউ এর মত কোন কিছু আনতে পারবে না। শুধু তিনিই এটা আনতে পারবেন যিনি আসমান ও যমীনের গোপন রহস্য জানেন। তিনি তোমাদের কথা শুনেন, তোমাদের অবস্থা জানেন। [ইবন কাসীর]

তিনি সমস্ত বান্দার কথা শ্রবণ করেন ও সকলের আমল সম্পর্কে সম্যক অবহিত। তোমরা যে মিথ্যা বলছ, তা তিনি শুনছেন আর আমার সত্যতা ও যে দাওয়াত আমি তোমাদের দিচ্ছি তার যথার্থতা সম্পর্কে ভালোই জানেন।

بَلۡ قَالُوۡۤا اَضۡغَاثُ اَحۡلَامٍۭ بَلِ افۡتَرٰىهُ بَلۡ هُوَ شَاعِرٌ ۚۖ فَلۡیَاۡتِنَا بِاٰیَۃٍ کَمَاۤ اُرۡسِلَ الۡاَوَّلُوۡنَ ﴿۵﴾

বরং তারা বলে, এসব অলীক কল্পনা, হয় সে এগুলো রটনা করেছে, না হয় সে একজন কবি।(১) অতএব সে নিয়ে আসুক আমাদের কাছে এক নিদর্শন যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্ববর্তীগণ।

(১) যেসব স্বপ্নের মানসিক অথবা শয়তানী কল্পনা শামিল থাকে, সেগুলোকে أحلام বলা হয়। এ কারণেই এর অনুবাদ “অলীক কল্পনা” করা হয়েছে। এর আরেক অর্থ হয়, মিথ্যা স্বপ্ন। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা প্রথমে কুরআনকে জাদু বলেছে, এরপর আরও অগ্রসর হয়ে বলতে শুরু করেছে যে, এটা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন ও অপবাদ যে, এটা তাঁর কালাম। অবশেষে বলতে শুরু করেছে যে, আসল কথা হচ্ছে লোকটি একজন কবি। তার কালামে কবিসুলভ কল্পনা আছে। এভাবে কাফেররা সীমালঙ্ঘন ও গোড়ামীর বশে যা ইচ্ছে তা-ই এ কুরআনের জন্য সাব্যস্ত করছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “দেখুন, তারা আপনার কী উপমা দেয়! ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, সুতরাং তারা পথ পাবে না।” [সূরা আল-ইসরা: ৪৮] [ইবন কাসীর]

গোপনে সমালোচনাকারী অত্যাচারীরা এতেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং তারা বলে, এ কুরআন তো অর্থহীন স্বপ্নের মত বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারার এক সমষ্টি। বরং তা নিজের মনগড়া (স্বকপোলকল্পিত), বরং সে একজন কবি তথা এই কুরআন পথনির্দেশকারী গ্রন্থ নয়, কবিতাগুচ্ছ। অর্থাৎ, তারা কোন এক শ্রেণীর কথার উপর অটল নয়, বরং প্রত্যহ নিত্য নূতন পাঁয়তারা বদলায় এবং নূতন নূতন অভিযোগ আরোপ করে।

[2] অর্থাৎ, যেমন সামুদ জাতির জন্য উটনী ও মূসা (আঃ)-এর জন্য লাঠি ও উজ্জ্বল হাত ইত্যাদি।

الهك متكثر حتى
سورة القمر ١

سورة الأنبياء ١

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, “কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকেদের পূর্বে যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে ‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) আদেশ করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইল্‌ম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে (পৃথিবীতে প্রদত্ত) তার সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইল্‌ম শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টিলাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইল্‌ম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর (দুনিয়াতে) তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার ধনদৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কী আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাবর্গকে) হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম ১৯০৫ নং)

দুনিয়ার জন্য মেহনত এত কর যে তোমাকে সারা জিবন পৃথিবীতে বসবাস করতে হবে কিন্তু সেই কিয়ামতের জন্য এত মেহনত কর যে তোমাকে জোহর বাদে আসরের মধ্যে মরণ হতে পারে।







https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2020/03/13/885221

কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে পাচঁটি কঠিন।

কিয়ামত একটি ভয়াল দিনের নাম। এটা কখন কিভাবে শুরু হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কারও জানা নেই। কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টিকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে পাচঁটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

এ সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, (কিয়ামতের মাঠে) পাঁচটি বিষয়ে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানব সন্তানের পা উঠাতে দেওয়া হবে না। ক. জীবন কীভাবে শেষ করেছ? খ. যৌবন কিভাবে অতিবাহিত করেছ? গ. ধনসম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছ? ঘ. কোন পথে ধনসম্পদ তা ব্যয় করেছ? এবং ঙ. অর্জিত জ্ঞানের কতটুকু আমল করেছ?

আমরা জানি, জীবন মূলত কতগুলো মুহূর্তের সমষ্টি।

জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর একক নিয়ন্ত্রণে। এর মাধ্যমে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন।

কে সৎ কাজ করে আরকে অসৎ পথে জীবন ব্যয় করে। পরীক্ষার জন্যে যে জীবন নির্দিষ্ট, তা যেনতেনভাবে ব্যয় করার সুযোগ নেই।

আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে না পারার পরিণতি যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে।

বলা চলে, যৌবন হচ্ছে জীবনের বসন্ত কাল। যে কেউ যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে মানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করতে পারে। আবার এই শক্তিকে জুলুম অত্যাচার-অনাচার সৃষ্টিতে লাগাতে পারে। অনেকে ধারণা করে জীবন ও যৌবনে অনাচার করলেও বুড়ো বয়সে নেক কাজে আত্ম নিয়োগ করব। এমন আশা পোষণের কোনো মূল্য নেই। কারণ, আগামীকাল বেঁচে থাকার কোনো গ্যারান্টি কারও নেই। পক্ষান্তরে যৌবনকাল বিষয়ে যেহেতু প্রশ্ন হবে, তাই তা চলে যাওয়ার আগেই সবাইকে সর্তক হতে হবে।

বলা চলে, যৌবন হচ্ছে জীবনের বসন্ত কাল। যে কেউ যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে মানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করতে পারে। আবার এই শক্তিকে জুলুম অত্যাচার-অনাচার সৃষ্টিতে লাগাতে পারে। অনেকে ধারণা করে জীবন ও যৌবনে অনাচার করলেও বুড়ো বয়সে নেক কাজে আত্ম নিয়োগ করব। এমন আশা পোষণের কোনো মূল্য নেই। কারণ, আগামীকাল বেঁচে থাকার কোনো গ্যারান্টি কারও নেই। পক্ষান্তরে যৌবনকাল বিষয়ে যেহেতু প্রশ্ন হবে, তাই তা চলে যাওয়ার আগেই সবাইকে সর্তক হতে হবে।
এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিয়ষের পূর্বে গুরুত্ব প্রদান করো- ক. যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে। খ. সুস্থতাকে রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে। গ. সচ্ছলতাকে দরিদ্র হওয়ার আগে। ঘ. অবসরকে ব্যস্ত হওয়ার আগে। ঙ. হায়াতকে মৃত্যু আসার আগে। -তিরমিজি শরীফ

তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্নে বলা হয়েছে, মালসম্পদ কোথায় হতে উপার্জন করেছ এবং কোথায় ও কিভাবে তা ব্যয় করেছে?

জ্ঞানীরা বলেছেন, দুনিয়ার মোহ মানুষের স্বভাব জাত। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘অব্যশই মানব হৃদয়ে সম্পদের মোহ অতি প্রবল। ’ -সূরা আদিয়াত: ৮
এটা কখন কিভাবে শুরু হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কারও জানা নেই।  কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টিকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে সম্পদ মানুষের জীবনের অপরিহার্য এক বিষয়। এটা ছাড়া জীবনের এক দিনও অতিবাহিত করা যায় না। কিন্তু এর একটি সীমা আছে। আল্লাহতায়ালা ধনসম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-বিধান বর্ণনা বলে দিয়েছেন। যেমন ব্যবসাকে হালাল করেছেন আবার সুদকে হারাম করেছেন। ইসলামের এ বিধানগুলো রক্ষা করে চলতে হবে। হালাল পথে উপার্জন করে হালাল পন্থায় খরচ করতে হবে।

শেষ প্রশ্ন করা হবে- অর্জিত জ্ঞানের কতটুকু আমল করা হয়েছে এ বিষয়ে। বলা হয়, যে জ্ঞানী তার অর্জিত জ্ঞানের ওপর আমল করে না সে জ্ঞানকে অসম্মানিত করে। আমল করে না সে জ্ঞানকে অসম্মানিত করে। এখানে ইলম বলতে অহির জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে আজ যে অবক্ষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর মূলে রয়েছে মানুষের অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করা। হাদিসে এ সম্পর্কেই বলা হয়েছে। বস্তুত শুধু জানাটাই মুক্তি নয় বরং মানায় মুক্তি। কিয়ামতেও প্রশ্ন হবে জানার কতটুকু মানা হয়েছে এ বিষয়ে। আমলকে মিজানের পাল্লায় তোলা হবে এবং এর ওপর জান্নাত-জাহান্নামের ফায়সালা হবে।

হাদিসের শিক্ষা
১. কিয়ামত একটি কঠিন ও ভয়াবহ দিন। সমগ্র সৃষ্টি ওই দিন আল্লাহর কাছে হাজির হবে। ন্যায় ও অন্যায়ের বিষয়ে বিচার করে আর জান্নাতি ও জাহান্নামি কারা তা ঘোষণা হবে।

২. যে প্রশ্ন হাশরের মাঠে হবে। এর প্রস্তুতি দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুর আগেই শেষ করতে হবে। নতুবা তখন আফসোস করে কোনো লাভ হবে না।

৩. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান ও আল্লাহর দান। একে অপচয় করা যাবে না, জীবনকে সঠিক পথে ব্যয় করতে হবে।

৪. যৌবনকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে।

৫. জীবন পরিচালনায় হালাল রুজি অন্বেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। হারামের রাজপথ ছেড়ে দিয়ে হালালের কণ্টকাকীর্ণ গলিপথে চলিতে হবে। 

৬. কোনো অবস্থায় হারামের পথে মাল-সম্পদের এক কণাও ব্যয় করা যাবে না।

৭. জ্ঞান শুধু অর্জন করাই সার্থকতা নয় বরং অর্জিত জ্ঞানকে আমলে রূপান্তর করাই সফলতা। সফলতার ফায়সালা হবে আমলের ওপর।

বর্ণিত প্রশ্নের আলোকে সবার জীবন গড়ে তোলা দরকার। কারণ, এক একটি প্রশ্নের মধ্যে সমগ্র জীবন রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে কিয়ামতের কঠিন সংকট উত্তরণে প্রস্তুত হওয়ার তওফিক দিন।

মৃত্যু আসার আগেই পরকালের প্রস্তুতি

পবিত্র কুরআনে সূরা মুনাফিকুনের ১০ ও ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো। অন্যথায় (মৃত্যু এলে) সে বলবেÑ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির যখন নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।’
এখানে এ কথা জেনে রাখা দরকার, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমগ্র বিশে^র স্রষ্টা ও অধিপতি। আকাশও তাঁর সৃষ্টি এবং অধিকারভুক্ত। তিনিই সব কিছুর মালিক। তাঁর কোনো কথা, তাঁর কোনো কাজের ওপর কারো কোনো প্রশ্ন করার অধিকার নেই। পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের ১৭২ নং আয়াতে আছে, ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনি আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের ওপর তাদের প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই। আমরা অঙ্গীকার করছি; আবার না কিয়ামতের দিন বলতে শুরু করো যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।’

এ কথা জেনে রাখা দরকার, রাব্বুল আলামিন হজরত আদম আ:কে সৃষ্টি করার পর আদম আ:-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সব বংশধরকে রূহ সৃষ্টি করলেন এবং তাদের জ্ঞান ও বাকশক্তি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা রুবুবিয়্যাত তথা আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র রব (প্রভু) Ñএ কথার স্বীকৃতি এভাবে নিয়েছেন ‘আলাসতু বি রব্বিকুম’ অর্থাৎ ’আমি কি তোমাদের প্রভু নই’? সব রূহ জবাব দিলো, ‘বালা’, হ্যাঁ অবশ্যই। এ আলমে আরোয়াহ তথা রূহের জগতের স্বীকৃতি থেকে মানবজাতির প্রথম সফর শুরু হয়। ‘আলাসতু’ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির এটাই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর এ কথা চিরসত্য যে, জন্ম হচ্ছে মৃত্যুর সংবাদদাতা। আর জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩৫ নং আয়াতে আছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে’। এ আয়াতে ‘নফস’Ñবলে পৃথিবীর জীব বোঝানো হয়েছে। আর তাদের সবার মৃত্যু অপরিহার্য। এ ছাড়া সূরা কাফ-এর ১৯ নং আয়াতে আছে, ‘মৃত্যু যন্ত্রণা নিশ্চিত আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।’

মৃত্যুর পর মানুষের কিয়ামত শুরু হয়ে যায়। মৃত্যুর পর কোনো মানুষ আর দুনিয়াতে ফেরত আসে না। পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফে মৃত্যুর কষ্ট ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মতের হায়াত ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে’ (তিরমিজি)। বস্তুত দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় একেবারেই সঙ্কীর্ণ। আর আখিরাতের জীবন অনন্ত, অসীম ও চিরন্তন।
প্রতি মুহূর্তে মানুষ মৃত্যু আশঙ্কার সম্মুখীন
পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ১ নং আয়াতে আছে, ‘মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী, অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে’। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীকে চিন্তা করতে হবে যে, আমার হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, আমার অন্যমনষ্ক কিংবা উদাসীন হওয়া মোটেই সমীচীন হবে না। কেননা উল্লিøখিত এ আয়াতে বোঝা যায়, মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। এখানে পৃথিবীর বিগত বয়সের অনুপাতে ঘনিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। কারণ, এই উম্মতই হচ্ছে সর্বশেষ উম্মত। যদি ব্যাপক হিসাবে ধরা হয়, তবে কবরের হিসাবও এতে শামিল রয়েছে। প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর পরমুহূর্তেই এই হিসাব দিতে হয়। এ জন্য প্রত্যেকের মৃত্যুকে তার কিয়ামত বলা হয়েছে।
হাদিস শরিফে আছে, কবরে মুনকার-নাকির ফেরেশতা তিনটি প্রশ্ন করবেÑ ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দ্বীন কী ছিল? ৩. তোমার নবী কে? সত্যিকার মুমিন ব্যক্তি সেই তিনটি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের জবাবগুলো সঠিকভাবে দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তাফসীর সূরা আম্বিয়া (১-৫)

* অনেক নবীর নাম এসেছে। ১৮ এই সূরাতে এসেছে।
* পুরনো যুগে নাযিলকৃত সূরা।

No comments